মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এই সাজা।
Published : 28 Jul 2022, 12:13 PM
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনায় হত্যা, গণহত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ছয় আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন: খুলনার বটিয়াঘাটার আমজাদ হোসেন হাওলাদার, সহর আলী শেখ, মো. আতিয়ার রহমান শেখ, মো. মোতাসিন বিল্লাহ, মো. কামালউদ্দিন গোলদার ও মো. নজরুল ইসলাম।
তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক; বাকি আসামিরা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় খুলনার বটিয়াঘাটায় যেসব যুদ্ধাপরাধ তারা ঘটিয়েছেন, তার বিবরণ উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।
২০৩ পৃষ্ঠার এ রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। আসামিদের সাজা ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আল ফয়সাল আলী, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর বাদল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে সবকটি অভিযোগ সন্দোহাতীতবাবে প্রমাণ করতে পারায় ট্রাইব্যুনাল ছয় আসামিকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।”
তবে এ রায়ে সংক্ষুব্ধ আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি বলেন, “আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।”
পলাতক নজরুল ইসলামের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমি মনে করি।”
এ মামলার মোট আসামি ছিলেন সাতজন, তাদের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে আসামি মোজাহার আলী শেখ মারা যান। পরে বাকি ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। এরপর ২০১৭ সালের ৮ অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
পরের বছর এ মামলার অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ৭ নভেম্বর।
সাক্ষীদের জেরা শেষে ২২ মে যুক্তিতর্ক শেষ হলে মামলাটি যে কোনো দিন রায়ের জন্য রাখে ট্রাইব্যুনাল।
যা যা অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ অগাস্ট আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ চার-পাঁচজন রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিনোদ মণ্ডলকে অবৈধভাবে আটক-নির্যাতন, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা।
তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের চারজনকে হত্যা, চার-ছয়টি বাড়ির মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে আসামিরা।
চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বরে আসামিরা বটিয়াঘাটার বারো আড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।