“প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষা স্তরের মূল স্তম্ভ; এর প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে,” বলেন অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন।
Published : 18 Oct 2024, 08:17 PM
মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উঠে এসেছে এক সেমিনারে।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘প্রাথমিক শিক্ষা ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওই সেমিনারে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বাজেট বাড়ানো ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বেশি কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।
সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, “শিক্ষা সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
ইউজিসির এ সদস্য বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষা স্তরের মূল স্তম্ভ। এর প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষকদের পেশা নিয়ে অন্য কারোর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।”
‘প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ’ এর ব্যানারে ওই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে ভারতের ফকিরচাঁদ কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত) সংগীত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের নিম্নহারে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। শিক্ষকদের ক্ষুধার্ত রেখে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান সম্ভব নয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, “শিক্ষকদের কোনো শ্রেণিতে বিভক্ত করা যাবে না। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শ্রেণির শিক্ষকই মানুষ গড়ার কারিগর। তার মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষকরা কাদামাটিতে ঘষামাজা করে একটি প্রকৃত রূপ প্রদান করেন।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ও পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সেমিনারে ওই প্রসঙ্গ ধরে ‘বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির’ (বাকবিশিস) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির মধ্যে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেড শতভাগ সমর্থন করি। একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ প্রদান অতীব জরুরি।”
প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতিতে বার্ষিক বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিতের কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এম আকাশ। সেইসঙ্গে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর কথাও বলেন তিনি।
সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খোরশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রস্তাবনা অত্যন্ত যৌক্তিক। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় যেভাবে নানা ধরনের বৈষম্য রয়েছে, সেই বৈষম্য চলমান রেখে একটি অত্যাধুনিক মানসম্মত জাতি গঠন সম্ভব হবে না।
“এছাড়া সামাজিক বৈষম্য নিরসনে শিক্ষাকে একমুখী করতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান প্রদান না করলে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেওয়া সম্ভব হবে না।”
সেমিনারে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন, পদোন্নতি এবং প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেডে বেতনের কথা বলেন আলোচকরা। এছাড়া শিক্ষক সুরক্ষা আইন, পদন্নোতির জটিলতা নিরসন এবং নিম্নমানের টিফিন ভাতার বিষয়টিও উঠে আসে।
‘প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির’ সভাপতি মো. আবুল কাশেম সেমিনারের শুরুতে বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের’ সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির’ সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক অজিত পাল, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির’ সভাপতি মো. আবুল হোসেন, ‘প্রধান শিক্ষক সমিতির’ সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।