“দায়িত্ব নেওয়ার পর কলেজগুলোকে স্বাধীন সত্তা হিসাবে কী করে সংগঠিত করা যায়, সেজন্য একটি কমিটি করেছিলাম। কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে,” বলেন তিনি।
Published : 20 Nov 2024, 05:46 PM
ঢাকার সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ‘অপরিণামদর্শী’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজগুলোকে একটি আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক বৈষম্য আছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে কলেজগুলোকে বের করে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আলাদাভাবে স্বাধীন সত্তা হিসাবে কী করে সংগঠিত করা যায়, সেজন্য একটি কমিটি করেছিলাম। সে কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
“আমরা একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি অতি শিগগিরই করতে যাচ্ছি। এই কলেজগুলো একত্রিত একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে, কলেজগুলোকে কীভাবে আরও উৎসাহিত করা যায়, তাদের সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামো কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কীভাবে দেওয়া যায়, সেটার নাম তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই দেওয়া হবে।”
অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে কলেজটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, “ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোকে একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলো শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছে। সেশন জট, পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতাসহ অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
“বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদের একটি সরকার। ১৯৯৬ সালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমাকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সরকারের বিষয়ে যখন আমাকে বলা হল আমি স্ব-উদ্যোগে বলছিলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেব।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
অন্য কলেজগুলো হল- ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
অধিভুক্তির ফলে এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এর মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে সোমবার মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ আটকে দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। রাতেও তারা কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। পরে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগের আশ্বাসের পর তারা সড়ক ছাড়েন।
ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “মনে রেখ, যে নামই দেওয়া হোক না কেন, আসল কথা হল শিক্ষার মানোন্নয়ন করা। শিক্ষার বৈষম্য দূর করা। কী নাম দেবে সেই স্বতন্ত্র সত্তার, সেটা তোমরাই ঠিক করবে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সবচেয়ে বড় শিক্ষাবিদদের নিয়ে যেই কমিটি গঠন করা হবে, তাদের কাজ তোমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পারবে এবং এর জন্য বসে থেকে লাভ হবে না। কারণ আমাদের সময় সংক্ষিপ্ত।
“কাজেই কমিটি কবে রিপোর্ট দেবে, সেটা নিয়ে তোমরা মাথা ঘামাবে না। আমরা এখন থেকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো এখন থেকেই শুরু করে দেব। যাতে তোমাদের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।”
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বর্তমানে যারা অনার্স বা মাস্টার্সে আছে, সেটা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়। বরং যে অসুবিধাগুলো আছে, তা নিয়ে এখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে অনুরোধ করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় যে অসুবিধা আছে, সেগুলো দূর করতে আরও সচেতন হওয়া। আমরা যাই করি না কেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে তা বৈধতা দিতে হবে। আমরা আশা করি, সেই বৈধতা দেওয়া হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ, নতুন সময় এসে অনেক অস্থিরতা গিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা সম্পূর্ণ অভিভাবকহীনতায় পেয়েছি, সেখানে কর্তৃপক্ষও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বল্পকালীন সময়ে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে যেতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে এটা নিদর্শন হিসেবে থাকে।
“তোমাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে জানিও। তবে আর রাস্তা অবরোধ নয়, বিশৃঙ্খলা নয়, আমরা শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। যেখানে ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরে আসবে।”
গণআন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “অনেক সংগ্রাম করে রাস্তায় নেমে যারা আহত হয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করছি। যারা নিহত হয়েছে, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এখন থেকে আমরা আবার আগের শিক্ষার পরিবেশে ফিরে যেতে চাই।”
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
পুরনো খবর-
কমিটি গঠনের আশ্বাসে তিতুমীর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আপাতত স্থগিত
তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহার, ট্রেন চলাচল শুরু
অবশেষে সড়ক ছাড়লেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা