সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রোববার মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
Published : 24 Mar 2025, 09:49 PM
ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ইঙ্গিত দিলেও সেরকম কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সোমবার বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “এ বছর ফ্যাসিবাদ পরবর্তী নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে। এবারের উদযাপনটা দুই দিনব্যাপী হবে। চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজনও থাকবে, পহেলা বৈশাখের আয়োজনও থাকবে জাতীয়ভাবে। তার মধ্যে এ শোভাযাত্রাও একটা আয়োজন।
“আমাদের চারুকলা অনুষদ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং তারা দিন-রাত কাজ করছে। এর সঙ্গে আরও অনেকেই যুক্ত হবে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, তাদের সাংস্কৃতিক টিম এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোও যুক্তও হবে।”
আগের দিন রোববার দুপুরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, “কী নামে এ শোভাযাত্রা হবে, সেটা আগামীকাল (সোমবার) এক সভায় নির্ধারিত হবে। এটার নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, সেখান থেকে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। যে নাম একবার পরিবর্তিত হয়েছে, যদি সবাই সর্বসম্মত হয় তাহলে পরিবর্তিত হবে, সবাই সর্বসম্মত না হলে নাও হতে পারে।
“এবারের শোভাযাত্রা শুধু বাঙালিদের না। এটা বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো প্রত্যেকের। ফলে আমাদের দেখতে হবে আমরা এমন একটা নাম দিই, যেটা আমাদেরই হবে, ওরা যেন ব্র্যাকেটে না পড়ে যায়।”
তবে সোমবারের সভায় এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটির ১১তম সেশনে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহমেদও সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি বা নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
নববর্ষ উদযাপনের সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবার আরও বড় পরিসরে, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে ও চব্বিশের চেতনাকে ধারণ করে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে। নববর্ষ উদযাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশাকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি ও বিভিন্ন উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টায় বের হবে। শিশুপার্কের সামনে থেকে ঘুরে শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
বিধি-নিষেধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন সংক্রান্ত সভায় কিছু বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
• পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে।
• বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
• ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। এরপর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।
• নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
• নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।
• বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
• নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে।
• বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদের সামনের ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
• সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হওয়ার পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করা যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টিএসসির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, টিএসসি সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশেপাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
সভায় নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
বর্ষবরণ হবে 'অন্তর্ভুক্তিমূলক', মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ইঙ্গিত