“আমাকে শুধু বলত, ও কিছু পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করে না। ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। তাই আওয়ামী লীগ করে,” বললেন দুরন্ত বিপ্লবের স্ত্রী শারমিন তামান্না।
Published : 18 Nov 2022, 10:38 PM
আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ‘খুনিদের খুঁজে বের করতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার স্বজনেরা।
শুক্রবার বিকালে মোহাম্মদপুরের একটি রেস্তোরাঁয় সাবেক এ ছাত্রনেতার পরিবারের তরফে স্মৃতিচারণ ও মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি তোলা হয়।
স্মরণসভায় দুরন্তের স্ত্রী ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন তামান্না বলেন, “(দুরন্ত বিপ্লব) আয়ুর্বেদ কলেজে ভর্তি হয়েছে, স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশের মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক। সে নিজেও সুস্থতা চেয়েছিল, দীর্ঘ জীবন চেয়েছিল। দীর্ঘ জীবন যে চেয়েছিল, তাকে নির্মমভাবে চলে যেতে হলো!
“তাও কখন? যখন তার প্রিয় দল ক্ষমতায়।”
নিখোঁজের পাঁচদিন পর গত ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে থেকে দুরন্তের লাশ উদ্ধারের কথা জানায় নৌ-পুলিশ। দুই যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে আগের মত সক্রিয় না থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন দুরন্ত বিপ্লব। কয়েক বছর ধরে কেরাণীগঞ্জের বাস্তা এলাকায় সোনামাটি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি খামার চালাচ্ছিলেন।
শারমিন তামান্না বলেন, “আমাকে শুধু বলতো- ‘যে আমি কিছু পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করি না। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই আওয়ামী লীগ করি’।
“আমি চাইব যে, এই শিশুর মতো সরল-ভালো মানুষটার এই অপঘাতে মৃত্যু, তাকে নদীতে উপুড় হয়ে ভেসে থাকতে হলো…। এটার বিচার চাই এবং যারা অপরাধী… আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তিনি একটু সদয় দৃষ্টি দেন। আমরা যেন দুরন্ত বিপ্লবের হত্যাকারীকে খুঁজে পেয়ে শাস্তি দিতে পারি।”
দুরন্ত বিপ্লবকে যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়ে তার ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, “ভাইয়ার যে জীবন, তার যে কন্ট্রিবিউশন- এই দেশের প্রতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতি, সে একটা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ডিজার্ভ করে। এটা আমরা তাড়াহুড়ায় করতে পারি নাই।
“যদিও আমরা কবর দিয়ে ফেলেছি, তার পরও আমি চাই প্রধানমন্ত্রী বা সরকার ভাইয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা করুক।”
স্মরণসভায় দুরন্ত বিপ্লবের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী, রাজনৈতিক সহকর্মীদের পাশপাশি ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক সহকর্মীরাও বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দুরন্ত বিপ্লবের বন্ধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সিতি সালমা খান বলেন, “ও কত বড় মানুষ ছিল সেই বক্তব্যে আমি যাব না। মায়ের কাছে তার সন্তান তার সন্তানই; বড় হবার প্রয়োজন নেই। বন্ধুর কাছে তার বন্ধু তার বন্ধুই; বড় হবার প্রয়োজন নেই। বোনের কাছে তার ভাই, ভাই। ভাইয়ের কাছে তার ভাই, ভাই। একটা সাধারণ মৃত্যু তার অধিকার। সেই অধিকার থেকে দুরন্ত বঞ্চিত হয়েছে।
“আমরা এর শেষ পর্যন্ত দেখে নেব। আমরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকব যে- কে তাকে আঘাত করেছে। সেই হাতটা আমি গুঁড়িয়ে দিতে চাই।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি বলেন, “দুরন্ত বিপ্লব মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন।”
দুরন্ত বিপ্লবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তিনি সত্যিকার অর্থে মা, মাটি এবং বাংলাদেশের একটা খাঁটি সন্তান ছিলেন।
“আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি, আমরা যারা শেখ হাসিনার কর্মী; আমরা সবাই যদি মন মানসিকতায় দুরন্ত বিপ্লবের মতো হতো পারি, আমি মনে করি বাংলাদেশ আর কোনোদিনই ঠেকবে না।”
গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরাণীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাড়ি আসার পথে নিখোঁজ হওয়ার পর ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার।
পাঁচ দিন বাদে তার লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ধারণা করে বলেন, দুরন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর তার পরিবার সেটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে।
গত ১৪ নভেম্বর দুরন্তের ছোটবোন শাশ্বতী বিপ্লব বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
যদিও দুরন্ত বিপ্লবের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান যেখানে শনাক্ত হয়েছে, ঘটনার দিন সেখানেই নদীতে নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার কথা জেনেছে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ।
তবে বুড়িগঙ্গায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী নৌ পুলিশ বলছে, ৭ নভেম্বর এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে তা তাদের জানা নেই। সবমিলিয়ে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা এখনও মেলেনি।
দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা
দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা