শোভযাত্রা শুরু হবে সকাল ৯টায়; চারুকলা থেকে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর ঘুরে শেষ হবে সেই চারুকলায়।
Published : 13 Apr 2025, 03:23 PM
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টায় এ শোভাযাত্রা শুরু হবে।
শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে শোভাযাত্রা।
যারা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে চান, তারা কেবল নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, শোভাযাত্রা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। ‘শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষায়’ আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
“শোভাযাত্রায় এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এবছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।"
পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা কিংবা ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের বানানো মুখোশ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় প্রদর্শন করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো বা বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখে রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদ সামনে ছবির হাটের গেইট এবং বাংলা একাডেমির সামনে রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট বন্ধ থাকবে।
ক্যাম্পাসে নববর্ষের সকল ধরনের অনুষ্ঠান সোমবার বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। বিকাল ৫টার পর বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না, কেবল বের হতে পারবেন।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যারা থাকেন, তারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য কেবল নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট থাকবে বলে জানিয়েছে জনসংযোগ দপ্তর।
বর্ষবরণের আয়োজন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর এবারই প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইউনেস্কোর অপরিমেয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া বর্ষবরণের 'মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম বদলে এবার রাখা হয়েছে বর্ষবরণের ‘আনন্দ শোভযাত্রা’, যা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
এদিকে শনিবার ভোরে চারুকলায় শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শান্তির পায়রার প্রতিকৃতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে মাস্ক পরা এক যুবককে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
রোববার চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, শোভাযাত্রা সামনে রেখে ফের ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত শাসক শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি তৈরিতে কাজ শুরু করেছে চারুকলার শিল্পীরা।
নতুন করে কাজ শুরু করলেও সোমবার সকালের মধ্যে ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ তৈরির কাজ শেষ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলছেন, “হয়ত এটি সম্ভব হবে না। তবুও চেষ্টা চলছে।”
মোটিফ পোড়ার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি ফেইসবুকে পোস্টে বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।