সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে নেমে বিক্ষোভের কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
Published : 24 Nov 2024, 01:16 PM
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে পঞ্চম দিনের মত সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চালকরা।
রোববার সকাল থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, শাহবাগ ও জতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে রিকশা চালকদের বিক্ষোভ ও মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে নেমে বিক্ষোভের কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের পূর্বনির্ধারিত 'গণঅবস্থান' কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে তাদের।
রিকশাচালকরা সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হতে থাকেন, একপর্যায়ে তারা সড়ক বন্ধ করে সেখানে অবস্থান নেয় বলে শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনছুর জানান।
তিনি বলেন, "সেখানে আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে, আশা করছি তাড়াতাড়িই তারা রাস্তা ছেড়ে দেবেন।"
শনিবার পুরানা পল্টনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড় ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় অটোরিকশা চালকরা সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে বলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান জানান।
তিনি বলেন, "তারা প্রেসক্লাবের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যেতে মোহাম্মদপুরে জমায়েত হয়। কিছুক্ষণ পর তারা মিছিল নিয়ে চলে গেছে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।"
বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বেশ কয়েকটি যানবাহনে তারা ভাংচুর চালায়। পরে 'ছাত্ররা' সেখানে উপস্থিত হলে রিকশাচালকরা চলে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বর্তমানে সেখানে ছাত্ররা অবস্থান করছে জানিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই শতরূপা কুণ্ডু বলেন, "রিকশাচালকরা সড়ক আটকে আচমকা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে স্টুডেন্টরা এলে রিকশাচালকরা চলে গেছে।"
গত মঙ্গলবার উচ্চ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ আসে।
প্যাডেল চালিত রিকশা সমিতি করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এর পরদিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ মিরপুর, মালীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা।
শুক্রবার ঢাকার জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রিকশাচালকদের বিক্ষোভ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে 'রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ' আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশ পুনর্বিবেচনাসহ লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিতে নীতিমালার বিষয়ে সুরাহা করতে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি।
গত মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সে সময় ঢাকার সাবেক দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলামও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।
পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
পরে ‘জীবিকার’ বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।