“আমরা তাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করি না। তারা এ আশ্বাস আগেও বহুবার দিয়েছেন। আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব,” বলেন আন্দোলনকারীদের একজন।
Published : 31 Jan 2025, 01:40 AM
ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি অনশন কর্মসূচিও অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা। রাত সোয়া ১টাও শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান করতে দেখা যায়।
অবরোধের কারণে মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
সড়ক অবরোধের মধ্যে রাত পৌনে ৯টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান।
শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান তিনি।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই আশ্বাসে তারা সড়ক অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন না।
আন্দোলনকারীদের একজন কলেজটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করি না। তারা এ আশ্বাস আগেও বহুবার দিয়েছেন। আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
বুধবার বিকাল ৫টার পর পাঁচ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ পাঁচ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের একজন আলী আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে অনশনে ছিলেন। ক্যাম্পাস শাটডাউন থাকার পরও অধ্যক্ষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। অনশনরতরা অসুস্থ হওয়ার পরও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন নাই।
“উল্টো তাদের দিকে মাইক দিয়ে গান-বাজনা চালাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সড়ক অবরোধ করেন।”
বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের ‘তিতুমীর ঐক্য’র সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বাড়াতে আসন সংখ্যা সীমিত এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত সোমবার রাতে ‘তিতুমীর ঐক্য’র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষালয়টির প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন।
একই দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি দেন তারা।
এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই কমিটি ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
দিনভর ভয়াবহ যানজট
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধে রাজধানীর গুলশান-বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেইট ও মগবাজার এলাকায় তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট।
এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী, পথচারীরা। রাতেও মহাখালী এলাকায় ধীরগতিতে গাড়ি চলতে দেখা যায়।
গুলিস্তান থেকে বাসে বেলা ১২টার দিকে রওনা হন হাফিজ মিয়া, বিকাল ৪টাতেও তিনি বাসেই বসে ছিলেন তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বসেছে, ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। গাড়ি এগোচ্ছে না। এখনও সাত রাস্তার মোড়েই পড়ে আছি। সঙ্গে কিছু মালপত্র আছে বলে হেঁটেও যেতে পারছি না।”
একই অবস্থা সোনিয়া আখতারের। অসুস্থ মাকে দেখতে বনানী যাবেন, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়িতে তেজগাঁওয়ের তিব্বত মোড়ে আটকে ছিলেন তিন ঘণ্টা ধরে।
বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন মহাখালী ও আশেপাশের এলাকাজুড়ে ভয়াবহ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী, পথচারীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মগবাজার থেকে গুলশান-বনানী সড়ক একেবারেই থমকে থাকতে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছোটেন অনেকে। তবে দূরের যাত্রীরা ব্যাগপত্র, মালামাল নিয়ে বাসেই অপেক্ষা করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বিকাল সাড়ে ৩টায় তেজগাঁও এলাকায় কথা হয় আবেদ আলীর সঙ্গে। তিনিও বাসে বসেছিলেন, তবে অবস্থা বেগতিক দেখে হাঁটা শুরু করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আবেদ আলী বলেন, ‘‘বলাকা পরিবহন থেকে নেমে হেঁটে রওনা হয়েছি, যাব কারওয়ান বাজার। কোনো অলিগলিই ফাঁকা নেই। সব যেন জ্যামে অচল হয়ে গেছে।”
৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সাত রাস্তার মোড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেন।
বিরক্তির স্বরে তিনি বলেন, “এভাবে ধর্মঘট হবে, সরকার নিশ্চুপ, প্রশাসন নিশ্চুপ…আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়?”
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, “তিতুমীর কলেজের আন্দোলনেরর প্রভাব পড়েছে পুরো মহাখালী, তেজগাঁও এলাকায়। ওইদিকে গাড়ি খুব স্লো পাস হচ্ছে, যে কারণে তীব্র জটলা তৈরি হয়েছে।
“আমরা মহাখালী এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে রেগুলার ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা করছি। যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে, তাদেরকে সেদিক দিয়ে পাস করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি।”
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “উত্তরা থেকে আসা যানবাহনগুলো ফ্লাইওভার দিয়ে পাস করার চেষ্টা করছি। বিপরীত দিকের গাড়িগুলোকেও বনানীর দিকে পাঠিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।”
তিনি বলেন, “একেতো আজ বৃহস্পতিবার, তার মধ্যে কালকে আবার ইজতেমা। আমরা ডাইভারস দিয়ে কোনোরকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”