এ বিষয়ে আংশিক শুনানির পর আগামী ৬ নভেম্বর পরের শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।
Published : 30 Oct 2024, 07:15 PM
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জে করা রিট আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে; পরের শুনানি হবে আগামী বুধবার।
বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আংশিক শুনানি নিয়ে পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
শুনানি শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন অ্যাডভোকেট শরীফ ভুঁইয়া। পরে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক আগামী বুধবার বাকি শুনানির দিন রাখেন।
বিচারক বলেন, “আজ হিয়ারিং ওপেন করলাম। পার্ট হার্ড (আংশিক শুনানি) থাকল। আগামী বুধবার আবার শুনব। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুনব। বুধবার ও বৃহস্পতিবার।”
সরকার পতনের পর গত অগাস্টে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন এ রিট আবেদন করেন এবং আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করে।
পরে এ রিটে পক্ষভুক্ত হন বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও আরেকজন আইনজীবী।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং একই বছরের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেন।
ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
সংবিধানের এসব সংশোধন বাতিল চেয়ে বদিউল আলমসহ পাঁচজন রিট আবেদন করেন। বাকি চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৯ অগাস্ট বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর রায়ের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
প্রেক্ষাপট
১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন হলেও তখন বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
পরে বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ অগাস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধই থাকে।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিটকারীরা। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দেন।
তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।
ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে একটি আবেদন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে করা ৮০৭ পৃষ্ঠার ওই রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
আরও পড়ুন
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ নয়: হাই কোর্ট
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে বিএনপির রিভিউ আবেদনে ১০ যুক্তি