২০২১ সালে বাইক কিনতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দেন চট্টগ্রামের একজন। মোটর সাইকেল বুঝিয়ে দিতে না পারার পর তাকে চেক দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যাত হয়।
Published : 02 Jun 2024, 09:44 PM
চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।
তিন বছর আগে ইভ্যালি থেকে মোটর সাইকেল কিনতে টাকা দেওয়া এক ব্যক্তির মামলায় রোববার চট্টগ্রামের সপ্তম যুগ্ম ও দায়রা জজ মো. মহিউদ্দিন এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহরিয়ার ইয়াছির আরাফাত তানিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোটর সাইকেল কেনার ঘটনায় চেক প্রতারণার মামলায় আদালত এ রায় দিয়েছেন। রায়ে এক বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দিয়েছেন।”
মামলার বিবরণে জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকার জসিম উদ্দিন আবিদ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মোটরসাইকেল কেনার জন্য ইভ্যালিকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দিতে না পারায় তারা একটি চেক দেয়।
সেই চেক সুনির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলে প্রত্যাখাত হয়। এরপর আবিদ ২০২১ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রামের আদালতে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।গত ২৩ মে ঢাকায় একই ধরনের একটি মামলায় বাদীর সঙ্গে আপস রফায় গিয়ে সাজা থেকে রেহাই পান ইভ্যালির দুই শীর্ষ কর্তা।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর গাড়ি, মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মত পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া ফেলে অনলাইন মার্কেট প্লেস ইভ্যালি।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিপুল অঙ্কের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি; ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি।
এক পর্যায়ে ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে ইভ্যালি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কিছু ইকমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভে নামে গ্রাহকরা।
মামলার বোঝা নিয়ে আগেই জেল খেটেছেন রাসেল ও শামীমা। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল শামীমা এবং ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাসেল জামিনে কারামুক্ত হন। তারা আবার ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে এখন অগ্রিম টাকা নিয়ে অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি করা হয় না। ক্যাশ অন ডেলিভারির ভিত্তিতে বিক্রি হচ্ছে পণ্য।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ১৯ মে ঢাকার কারওয়ান বাজারে তাদের কার্যালয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ পরিশোধ বিষয়ে পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। সেই সভাতেও যোগ দেন ইভ্যালির রাসেল।
সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “ইভ্যালিতে গ্রাহকরা অলরেডি কেনাকাটা শুরু করেছে। আমি আশা করছি ইভ্যালির কোনো গ্রাহক কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। যারা আমাদের কাছে টাকা পায়, আমরা আমাদের মুনাফা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা তাদের দিয়ে দিয়েছি। বাকি সবাইকে দিতে একটু সময় লাগবে শুধু।
“আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে আমরা সকলের টাকা ফেরত দেব। ৬ মাসের ভেতরে একটা বড় পরিবর্তন দেখবেন আপনারা। আর সবার টাকা ফেরত দিতে আমাদের ২ বছর সময় লাগবে।”
আরও পড়ুন: