দশ মাসে দেশে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
Published : 05 Dec 2023, 08:14 PM
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাই কোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই আলোকে দ্রুত আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
প্ল্যাটফর্মটির সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেছেন, “সহিংসতা, যৌন হয়রানির ঘটনার এই ভয়াবহ বাস্তবতার পেছনে যথাযথ বিচার না হওয়ার বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখে। আমরা আরও মনে করি, যৌন হয়রানির ঘটনার বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক।
“এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ আইন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা দেশের সকল রাজনৈতিক দলের কাছে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।”
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা ফোরামের পক্ষ দুটো দাবি তুলে ধরেছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আলাদা একটি আইন প্রণয়নের প্রণয়নের লক্ষ্যে উপরোক্ত আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছি, আইনটি পাসের জন্য সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করেছি।
“শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর গড়ে তোলাও আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা মনে করি, আলাদা অধিদপ্তর থাকলে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দশ মাসে দেশে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৫০২ জন নারী, বাকি ১৯৩ জন কন্যাশিশু। আর গত ১০ মাসে আত্মহত্যা করেছে ৫৯০ জন নারী ও কন্যাশিশু; যার মধ্যে ৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু। এ সময়ে ঘরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ জন কন্যাশিশু।
গত ১০ মাসে ৩২ জন নারী ও ১৩৬ জন কন্যাশিশু পাচার ও অপহরণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ২২ জন, যার মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু। এর বাইরে ৫৩ জন নারী ও ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল এ সময়ে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ৭০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং ২৮টি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।
তারা জানিয়েছে, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছে ১৩ জন নারী ও ৩৪ জন কন্যাশিশু। ১০ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৯৬ জন নারী ও ২৫৬ জন কন্যাশিশু।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের বরাত দিয়ে নাছিমা আক্তার জলি বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন থানায় ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি।
চাইল্ড রাইটস স্পেশালিস্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট টনি মাইকেল গোমেজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সম্পাদক ওয়াহিদা বানু, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ফারজানা খান, গুডনেইবারস বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ রাজিয়া সুলতানা।