“বহুজনের এই সমাজে আমরা যে জীবন যাপন করি, তার সব কিছুই আমাদের সংস্কৃতির অংশ,” বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
Published : 30 Mar 2025, 12:12 PM
ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে এবার নবরূপে সেজেছে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো। আর মঞ্চে রয়েছে নাটক, গানের আয়োজন।
ঘুরে বেড়ানোর পাশপাশি নাটক ও গানের অনুষ্ঠান বাড়তি আনন্দ যোগাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, “বাংলাদেশ বহু ভাষার, বহু মতের, বহু ধর্মের দেশ। বহুজনের এই সমাজে আমরা যে জীবন যাপন করি, তার সব কিছুই আমাদের সংস্কৃতির অংশ।”
তিনি বলেছেন, কোনো বিভাজনের রাজনীতি আর এখানে স্বাগত নয়।
চাঁদ রাতে শিল্পকলায় ‘আনন্দ অনুষ্ঠান’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে রাজধানীবাসীর জন্য চাঁদ রাতের ‘আনন্দ অনুষ্ঠান আয়োজন’ করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে অনুষ্ঠানটি হবে এবং আয়োজনটি শিল্পকলার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বলে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে।
এ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “দুইটা গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঘটনা। চাঁদ রাতের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান, আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমি। ‘কথা কইও না’ ‘সাদা সাদা কালা কালা’ খ্যাত ইমন ও বেঙ্গল সিম্ফনী, ন্যান্সি এবং কাওয়াল আমেরী। সাথে মেহেদী উৎসব।”
“ঈদের দিন সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ঈদ জামাত ও ঈদ মিছিল। এক সময় ঈদ মিছিলের চল ছিলো। আবার ফিরে আসলো এবার থেকে। চলে আসুন সবাই, এই দুই অনুষ্ঠানেই।”
ডিএনসিসির দুই দিনের ‘আনন্দ আয়োজন’
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আনন্দ মেলার আয়োজন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেন (ডিএনসিসি)।
নগর সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে ঈদের দিন এবং ঈদের পর দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ‘ঈদ আনন্দ’ আয়োজন চলবে।
ডিএনসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ) ঈদের জামাত হবে।
ঈদের জামাত শেষে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হবে। মিছিলটি বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও হয়ে খামার বাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে (সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা) শেষ হবে।
এবার ঈদের পরপরই বাংলা নববর্ষ পড়ায় খুশির আমেজ থাকবে দীর্ঘ সময়। উৎসবের সময় বেড়ে গেলেও সেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় তা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানী ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
মিরপুরে মঞ্চনাটক
ঢাকার মিরপুর-১১ এর ঋদ্ধি গ্যালারিতে ঈদ উপলক্ষে মঞ্চায়িত হবে নতুন নাটক ‘তুম্বা ও প্রতিবেশী’। ঈদের দিন এবং ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত সোয়া ৮টায় নাটকটি মঞ্চস্থ হবে।
একজন ষাটোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত মানুষ এবং তার প্রতিবেশীর পোষ্য কুকুর তুম্বার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এ নাটক। নাটকটি প্রযোজনা করেছে বাঙলা থিয়েটার। রচনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি এই নাটকে একক অভিনয় করছেন মামুনুর রশীদ।
ইতোমধ্যে ‘তুম্বা ও প্রতিবেশী’ নাটকটির আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাঙলা থিয়েটার। টিকেটের জন্য যোগাযোগ করতে হবে- ০১৮৩১৯১০৯১৩ নম্বরে।
তিন দিনে নাটকের ছয়টি প্রদর্শনী হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, “মিরপুরে তো অনেক মানুষ বাস করে, কিন্তু সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা ঝিমিয়ে আছে। আর ঈদের আনন্দের সঙ্গে মঞ্চনাটক দেখার সুযোগ করে দেওয়ার ভাবনা থেকেই আমরা মিরপুরের ঋদ্ধি গ্যালারিতে নাটকটির প্রদর্শনী করছি।”
মিরপুর-১১ মেট্রোস্টেশনের কাছেই ঋদ্ধি গ্যালারি। ফলে ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে আগ্রহী দর্শক সেখানে যাতায়াত সহজ হবে বলে মনে করছেন এই বর্ষীয়ান নাট্যকার।
তিনি বলেন, “আশা করি দর্শক আসবেন, ঈদের আনন্দ আর ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি নাটক দেখবেন।”
চিড়িয়াখানা
ঈদেও অন্যান্য দিনের মতই খোলা থাকবে ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। খুব বেশি নতুন চমক নেই বলে জানিয়েছেন বিনোদন কেন্দ্রটির পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার।
তবে বাঘের দুটি বাচ্চা এবং জেব্রার বাচ্চা আছে, যা দেখে কেউ কেউ আনন্দ পেতে পারেন, বলেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি তো থাকেই। সপ্তাহজুড়ে যেভাবে চিড়িয়াখানা খোলা থাকে, ঈদের সপ্তাহেও সেভাবেই খোলা থাকবে। দর্শনার্থী যারা আসবেন, তাদের যেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।”
সাধারণ দিনগুলোতে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে, ঈদের সপ্তাহেও রোববার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানান চিড়িয়াখানার পরিচালক।
এছাড়া অন্য দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে।
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, “এবার তো ঈদের আগে রোববার বন্ধ থাকছে। ঈদের পরও যে রোববার, তা ঈদের প্রায় ছয় দিন পর। যার জন্য আমরা রোববার বন্ধ রাখার ব্যাপারেই ভেবেছি। তবে যদি দেখা যায়, দর্শনার্থীদের চাপ আছে- তখন হয়তো রোববারও খোলা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আপাতত রোববার সাপ্তাহিক ছুটি রাখা হবে বলেই ভাবা হয়েছে।”
জাতীয় জাদুঘর
ঈদের সপ্তাহে সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে জাতীয় জাদুঘরও বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের দিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশেষভাবে খোলা রাখা হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন জাদুঘরের উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের দিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এরপর সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে বৃস্পতিবার পর্যন্ত জাদুঘরও বন্ধ থাকবে। আর শুক্রবার জাদুঘরের সাপ্তাহিক ছুটি, ফলে শনিবার থেকে আগের সময়সুচি অনুযায়ী জাদুঘর খোলা থাকবে।”
জাদুঘরের নিয়মিত সূচি অনুযায়ী শনি থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অফিস খোলা থাকে। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি।
গ্যালারি খোলা থাকে শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা। তবে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যালারি খোলা থাকে।
শিশুমেলা
ঈদে দর্শনার্থীদের আনন্দকে আরো রঙিন করতে নবরূপে সেজেছে রাজধানীর শ্যামলী ‘শিশুমেলা’, যা ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড নামেও পরিচিত।
১৭টি ফ্যামিলি রাইড ও ৭০টির বেশি কিডস রাইড নিয়ে ঈদ এবং পয়লা বৈশাখের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নগরীর শিশুদের কাছে প্রিয় এই পার্কটি।
শুক্রবার সরেজমিনের পার্কটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশদ্বারে আলোকসজ্জার প্রস্তুতি চলছে। আর ভেতরে বিভিন্ন রাইডের পাশের দেয়ালও রঙ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ রাইড রঙ করার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
শিশুমেলার ব্যবস্থাপক রাজিবুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার মাস তো দর্শনার্থীদের চাপ কিছুটা কম থাকে। এ সময় আমরা রাইডগুলো মেরামত এবং রঙ করার কাজ করি। এবারও সবগুলো রাইড ঠিকঠাক করা হয়েছে। ঈদের কিছুদিন পরই তো পয়লা বৈশাখও আছে। সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।”
শিশুমেলা সাত দিনই খোলা থাকবে বলেও জানান রাজিবুল চৌধুরী।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও ঈদ উপলক্ষে দর্শানার্থীদের চাপ থাকলে রাত ১০টা পর্যন্তও খোলা রাখা হবে।
কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে শাহবাগের জাতীয় শিশু পার্ক। তাতে করে বিভিন্ন দিবসে শিশুদের ভিড় দেখা যায় শ্যামলীর শিশুমেলায়। এবারও দর্শনার্থীদের ঈদের আনন্দে শিশুমেলা পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পার্ক সংশ্লিষ্টরা।
শিশুমেলায় বিভিন্ন রাইডের পাশাপাশি ভেতরেই খাবারের জন্য রয়েছে রেস্তোরাঁ। পার্কটিতে প্রবেশে প্রত্যেককে গুনতে হবে ১০০ টাকা। আর প্রতিটি রাইডের জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা করে। তিন বছরের কম বয়সের শিশুদের টিকেট কাটতে হবে না।
শিশুমেলায় বিশেষ আকর্ষণ কী, জানতে চাইলে রাজিবুল বলেন, “দর্শনার্থীরা বেশি ভিড় জমান- মেরী গো-রাউন্ড, চুক চুক ট্রেন, হ্যানি সুইং, ক্রেজি কার, সোয়ান অ্যাডভেঞ্চার রাইডগুলোতে।