আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 08 Sep 2022, 12:06 PM
সোয়া চারশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং কানাডায় অর্থপাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১৪ জনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছেন।
পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রায় তিন ডজন মামলার মধ্যে এই প্রথম কোনো মামলা বিচারে এলো।
মামলার আসামিদের মধ্যে পি কে হালদার আছেন ভারতের কারাগারে। তাকেসহ দশজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।
বাকি নয়জন হলেন: পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
কারাগারে থাকা বাকি ৪ আসামি অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
বিচারক তাদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। পাশাপাশি সুকুমার ও অনিন্দিতার জামিন আবেদনও নাকচ করা হয় বলে দুদকের আইনজীব মীর আহমেদ আলী সালাম জানান।
তিনি বলেন, “অভিযোগপত্রে পি কে হালদার ও অন্যদের পলাতক হিসাবে দেখানো হয়েছে এবং তাদের অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে পি কে হালদার ও তার সহযোগেীদের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলায় আদালত বিচার শুরুর আদেশ দিল।”
পি কে হালদারের এক মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে এই ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয় ২৯ অগাস্ট।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
২০১৯ সালে দুদকের তদন্ত শুরুর পর পি কে হালদারের পালিয়ে যাওয়ার খবর মেলে। তখন শোনা গিয়েছিল, তিনি কানাডায় চলে গেছেন। কিন্তু গত ১৩ মে হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরদিন আসে গ্রেপ্তারের খবর।
তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩৪টি মামলা হয়েছে।
পি কে হালদারকে ফেরাতে ভারতের সহায়তা চাইল বাংলাদেশ
পি কে হালদারের গ্রেপ্তার দুই সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকের মেয়ে
পি কে হালদারের ‘সহযোগী’ অবন্তিকা গ্রেপ্তার
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজার মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ, যার দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন, যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা।
নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন আটতলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত), যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি, এর বর্তমান দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকারও বেশি।