পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং– আলোচনায় এ তিন পদ্ধতি।
Published : 09 Apr 2025, 01:20 PM
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চূড়ান্ত পদ্ধতি নির্ধারণে প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে একটি ‘অ্যাডভাইজারি কমিটি’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বুধবার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার কাজটি সম্ভাব্য তিন পদ্ধতিতে করা যায়। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং– এই তিন পদ্ধতির বিষয়ে আগেরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি-এর বিশেষজ্ঞসহ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালা করে ইসি। এরপর বুধবার এ বিষয়ে ইসির অবস্থান তুলে ধরলেন নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, “আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম হচ্ছে, একটা অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করব। গতকাল যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তাদের নিয়ে। তিনটি পদ্ধতির সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কী করে দুর্কবলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন।
“এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসব। আমরা যাই করি না কেন, যে সময়টা আমরা পাব, তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।”
প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার বিষয়ে ইসি ‘বদ্ধপরিকর’ জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, “ইসি একটা দিনও সময় নষ্ট করছে না। তবে কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা কারিগরি টিম কাজ করার পর চূড়ান্ত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি যদি সর্বোচ্চ ভোটারকে আনতে চাই, তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। এখনো কমিশনের অবস্থান একই আছে। কর্মশালায় প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই।
“কোনো অপশনকেই আমরা সিঙ্গেল আউট করছি না। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি সিঙ্গেল অপশন অ্যাপলিকেবল না। কমবাইন্ড অপশনের দিকে যেতে হবে। তিনটা পদ্ধতিকে যদি আনা যায়, তাহলে আমরা তিনটা পদ্ধতিকেই আনব।”
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশনও সেই প্রত্যাশা ধারণ করে। বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুসৃত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং।
“বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি, তাতে দূতাবাসে করার সুযোগ সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে। কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বুধবার কর্মশালা করি। যেখানে ১০টি টিম তাদের উপস্থাপনা উপস্থাপন করেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন ওই কর্মশালায়।
প্রক্সি ভোটের পক্ষে যুক্তি
নির্বাচন কশিমনার সানাউল্লাহ জানান, কর্মশালায় ১০টি উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরা হয়েছে।
“যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক কেন, বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতিসহ অন্যন্য বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীকে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।”
তবে অনলাইন ভোট যে এখনও জনপ্রিয় হতে পারেনি, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক দেশ চার পাঁচ বছর ধরে করছে। কর্মশালার আলোচনায় ওঠে আসা পদ্ধতিগুলো ফাইন টিউন করতে হবে।”
প্রক্সি ভোটের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটে আনতে চাই, তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে আনতে হবে, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও। পৃথিবীতে ২৫টির মত দেশ প্রক্সি ভোট করছে।”
তিনি জানান, ডিজেবল, যারা হাসপাতালে আছেন, গর্ভবতী, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বাহিনীতে দায়িত্বরত, কারাগারের যারা আছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মসচারী, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা, বিদেশে অবস্থান করছেন এমন ব্যক্তি, কূটনীতিবিদদের জন্য এই বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
তবে কিছু কিছু দেশ সবার জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা রেখেছে। যেমন ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলে সব পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে হবে।
“আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে যদি বড় পরিসরে অনেক প্রবাসীকে আনতে চাই, তাহলে প্রক্সি হচ্ছে ওনলি অপশন। তবে বাস্তবতার নিরিখে আমরা অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।”
অ্যাডভাইজারি কমিটি কী পরামর্শ দেয় সেটা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সানাউল্লাহ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন স্তরে মক ভোট করা, তারপর নির্বাচন। আমরা আগে জাতীয় নির্বাচনে করি, তারপর স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলতে পারব। যেখানে প্রবাসীরা একটা ভোটও দিতে পারে না সেখানে আমরা এমন পদ্ধতি আনব না যে প্রবাসীরা হোঁচট খায়। ইনশালল্লাহ সব টাইমইলি হয়ে যাবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়ার পর্যন্ত বলা যাবে না কতদিন সময় লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারেব। সংস্কার কমিশন পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ট্রায়াল পর্যন্ত আটটা ধাপের কথা বলেছেন। এখন ট্রায়াল কতদিন চলবে সেটা নেই। কাজেই এটা কারিগরি বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন।”
অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
পুরনো খবর
প্রবাসীদের ভোট কোন পদ্ধতিতে? বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে ইসি