ষষ্ঠ-সপ্তমে নতুন রুটিন, কেবল প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেবেন ক্লাস

একটি শ্রেণির একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে, একই বিষয়ের একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 12:43 PM
Updated : 1 May 2023, 12:43 PM

মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম এই দুই শ্রেণিতে এ বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করেছে শিক্ষা বিভাগ। নতুন কারিকুলাম ও বইয়ের পর এবার এই দুই শ্রেণিতে নতুন রুটিন দেওয়া হয়েছে। নিয়ম হয়েছে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ থাকলেই কেবল একজন শিক্ষক এই দুই শ্রেণিতে পড়াতে পারবেন।

রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রুটিন সংশোধন নিয়ে জারি করা নির্দেশনায় এসব সিদ্ধান্ত জানা গেছে। সেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গত বুধবার দেওয়া এক নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন বা শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।

রুটিন সংশোধন করে দেওয়া ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ অনুযায়ী প্রণীত পরীক্ষামূলক শিখন শেখানো সামগ্রী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এনসিটিবি শিখন শেখানো সামগ্রীগুলো বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে রিভিউ করিয়েছে এবং এনসিটিবির কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ‘ফিডব্যাক (ফলাবর্তন)’ সংগ্রহ করেছেন।

সেখানে বলা হয়, রিভিউ প্যানেলসহ সব অংশীজনের মতামত বিবেচনা করে ২০২৩ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস রুটিন সংশোধন করা হয়েছে। এটি অনুসরণ করেই সংশোধিত ক্লাস রুটিন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে মাউশি।

সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী যেসব নির্দেশনা মানতে হবে-

  • রোল কলের কারণে প্রথম পিরিয়ড হবে ৬০ মিনিটের এবং বাকি পিরিয়ড ৫০ মিনিটের।

  • প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই প্রতিদিন সমাবেশে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শরীর চর্চা, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন উপস্থাপনা যেমন গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচ, প্রভৃতিসহ অন্যান্য আয়োজন করতে পারে। এ লক্ষ্যে সমাবেশের সময় বাড়াতে হলে প্রয়োজনে বিদ্যালয় শুরুর সময় এগিয়ে আনা যাবে। কিন্তু কোনোমতেই সেশনের সময় কমানো যাবে না।

  • রুটিনে উল্লিখিত কোনো বিষয়েরই সেশন সংখ্যা বা ক্রম পরিবর্তন করা যাবে না।

  • জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১ বৈশাখ, ১ মে, ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর) শিখনকালীন কার্যক্রম হিসেবে ধরা হয়েছে। জাতীয় দিবসের সেশনে রুটিন অনুসরণ না করে দিবস পালনে বিভিন্ন বিষয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকরা আগে থেকেই পরামর্শ করে শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসের কার্যক্রম সাজাবেন, যাতে দিবস পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা প্রয়োজন, তা অর্জিত হয়।

  • প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণির একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে, একই বিষয়ের একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তিনিই সে বিষয়ের সেশন/শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

Also Read: নতুন শিক্ষাক্রম: আনন্দের মাঝে অভাবও ‘অনেক’

২০২৫ সালে সম্পূর্ণ নতুন পাঠক্রমে পড়বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় বদলে দিতে প্রস্তুত করা নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

নতুন এই শিক্ষাক্রমে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, “প্রথমে হয়ত কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে। পাইলটিং শেষ করার আগে সেগুলো সংশোধন সম্ভব হবে।”

তবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই শিক্ষার্থীদের হাতে আসার পরই বইয়ের নানা ভুল ও বিভিন্ন আধেয় নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

পাঠ্যপুস্তকের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার এবং তিনটি বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধনের কথা জানিয়েছিল এনসিটিবি।

তখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পরে এপ্রিলের শুরুতে এই দুই শ্রেণির সব বইয়ে সংশোধন আনার কথা জানানো হয়।

ওই সময় এই দুই শ্রেণির সব বইয়েই ভুল ও তথ্যগত অসঙ্গতিগুলোতে সংশোধনী এনে ঈদের পর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও আসে। শিক্ষাক্রম শুরুর চার মাস পর রোববার সেই সংশোধনী আসে।

শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণকে যুগোপযোগী, কার্যকর এবং আনন্দময় করতেই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়েছে শিক্ষাক্রমে।

চাপ কমাতে বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়নের আগে শিক্ষাবর্ষ জুড়ে চলবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। বেশ কিছু বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

তার আগে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০২৩ সালে দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম।

এরপর ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম এবং নবম শ্রেণি যুক্ত হবে নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়। ২০২৫ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় চলে আসবে।

Also Read: ষষ্ঠ-সপ্তমের ৪০ বইয়ে ৪২৮ সংশোধনী