ওই দিন সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা আশু করণীয়, মধ্য মেয়াদী বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার কী করতে পারে সেটার সর্বসম্মত সুপারিশমালা দেবেন, বলেন তিনি।
Published : 04 Feb 2025, 09:04 PM
গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘সংস্কার কমিশনগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছি।
“একই সঙ্গে ওই দিন সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা আশু করণীয় কি আছে, মধ্য মেয়াদি কি আছে বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার কি করতে পারে সেটার সর্বসম্মত সুপারিশমালা পেশ করবেন।’’
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে।
এসব কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বুধবার দেওয়ার কথা।
এ দুটি জমা দেওয়ার পর থাকবে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত আরও পাঁচ কমিশনের প্রতিবেদন।
আইন উপদেষ্টা বলেছেন, সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কাছে পাঠানো হবে।
“এরপর রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তির সঙ্গে আলোচনা এবং সমঝোতাক্রমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বসবে বলে আশা করছি। তারিখ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে “
আসিফ নজরুল বলেন, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দল, আন্দোলনের পক্ষের শক্তি এবং ছয় সংস্কার কমিশন প্রধানেরা উপস্থিত থাকবেন।
“এ আলোচনা মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে, রাজনৈতিক দলগুলো রাজি থাকলে রোজার মধ্যেও চালু থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের ক্ষেত্রে করণীয় কী তা ঠিক করা হবে। কারণ এ ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছিল সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন ও জরুরি কিছু রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন মীমাংসা করার জন্য। বাকী কমিশনগুলো কাজ করছে।’’
এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “ছয়টি কমিশনের কার্যক্রম আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেদিন থেকেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু।
“আলী রীয়াজ সাহেব যখন মধ্য ফেব্রুয়ারিতে আলোচনায় বসবেন, তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বসবেন না, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে বসবেন।”
সংবিধান নিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঐকমত্য সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংবিধান সংক্রান্ত কোনো কোনো সংশোধনীর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করলে, সবাই মিলে আইনে পরিণত করার প্রস্তাব দিতে পারেন। সেটা পরে যখন সংবিধান সংশোধন করা হবে তখন পোস্ট ভ্যালিডিটি (ভবিষ্যতে আইনি বৈধতা) দেওয়া যেতে পারে।
“আবার সামনে নির্বাচন যদি গণপরিষদ বা সংসদ নির্বাচন একই সঙ্গে হয়, তখন গণপরিষদের মাধ্যমে হতে পারে বা সাংবিধানিক কোনো সভার মাধ্যমে হতে পারে। এটা আমার মনোভাব। তবে, কী পদ্ধতিতে করা হবে তা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই করা হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার তার সরকারি বাসভবন যমুনায় রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় কমিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সেখানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ছিলেন।