“আমার কোনো ব্যবসা নাই; এই পত্রিকা চালাব আর লেখালেখি করব-এটাই আমার ইচ্ছা; এটিকে দাঁড় করিয়ে অবসরে যাব,” বলেন মাহমুদুর রহমান।
Published : 18 Oct 2024, 05:44 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক ‘আমার দেশ’কে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “যতই কষ্ট হোক আল্লাহ যদি চান…ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা আপনাদের হাতে আবার ‘আমার দেশ’ তুলে দেব ইনশাল্লাহ। মত প্রকাশের জন্য আওয়াজ তুলবে ‘আমার দেশ’।
‘‘হাতে আড়াই মাসেরও কিছু কম সময় রয়েছে। এর মধ্যেই আমরা সব কাজ শেষ করব।”
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমার দেশ পরিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘‘আমার দেশ’ স্বাধীনতার কথা বলবে, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে, বাংলাদেশের লুটেরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে ‘আমার দেশ’, গুম-সংস্কৃতির বিপক্ষে আওয়াজ তুলবে ‘আমার দেশ’।
“মানবাধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলবে ‘আমার দেশ’, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলবে ‘আমার দেশ’। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন, দোয়া করুন। ইনশাল্লাহ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে আবার আসব।”
পাঠকপ্রিয় দৈনিক ‘আমার দেশ’ চালুতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “সহযোগিতা বলতে আইনের দ্বারা যাতে ব্যুরোক্রেসির বটম লেকে ‘আমার দেশ’কে ভুগতে না হয়। এটা আমি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলে দিচ্ছি…কোনো ব্যুরোক্রেটিক বটম লেক আপনারা সৃষ্টি করবেন না ‘আমার দেশ’র চালুর ব্যাপারে।
‘‘আমি আশা করি, যারা সরকারে আছেন- তারা এটা করবেন না।”
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০৪ সালে বাজারে আসে দৈনিক ‘আমার দেশ’। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে পত্রিকাটি, ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয় “আমার দেশ’র প্রকাশনা। এর আগে ২০১০ সালের জুনেও ১০ দিনের জন্য পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে দুইবারই গ্রেপ্তার হন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি লন্ডনে চলে যান। সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘ ‘আমার দেশ’র আমরা যারা পরিচালক আছি, তারা সীমিত অর্থের মালিক। আর আমরা কোনো করপোরেট মিডিয়া না। বাংলাদেশে একমাত্র ‘আমার দেশ’ কোনো করপোরেট বা দলীয় মিডিয়া না। আমরা নিজেরা কষ্ট করে চালাই।”
‘ওরা ছাপাখানাকে টুকরো টুকরো করেছে’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমার বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাতিয়ার ‘আমার দেশ’র ছাপাখানা ফ্যাসিস্ট সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাকে টুকরো টুকরো করতে না পেরে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ছাপাখানাটিকে টুকরো টুকরো করেছে, এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্র।
‘‘অথচ বড় বড় কোনো সম্পাদকের মুখে এর কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, আর এটাই মিডিয়ার চরিত্র।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার যে প্রাথমিক হিসাব- প্রেসের যে মেশিনারিজ ও অন্যান্য যে ফিক্সড অ্যাসেট আছে, সেটার পরিমাণ ওই সময়ের- ২০১৩ সালের হিসাবে ২৫ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।
‘‘আর আমার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল অর্থাৎ নিউজ প্রিন্টের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি। সুতরাং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ও ফিক্সেড অ্যাসেট মিলিয়ে ৩৫ কোটি টাকা লস হয়েছে।”
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ‘আমার দেশ’ সম্পাদক বলেন, “আমার কোনো ব্যবসা নাই। এই পত্রিকা চালাব আর লেখালেখি করব…এটাই আমার ইচ্ছা। এটিকে দাঁড় করিয়ে অবসরে যাব।
‘‘আমাদের কোনো টাকা নাই। আপাতত অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোর বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে পত্রিকা বের করার জন্য অফিস দরকার, কম্পিউটার দরকার এবং টেকনোলজি দরকার-এগুলো সেটআপ করতে হবে।”
‘মিডিয়ার সম্পাদক-মালিকদের সংস্কার দরকার’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘‘আমার দেশ’ দেশের সার্বভৌমত্ব ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কণ্ঠস্বর ছিল। কাজেই কোনো পত্রিকার মালিক, কোনো পত্রিকার সম্পাদক ‘আমার দেশ’কে সহ্য করতে পারে নাই।
“সুতরাং এই যে ‘আমার দেশ’কে ধবংস করা হয়েছে এতে শেখ হাসিনা আনন্দিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত অধিকাংশ পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক আনন্দিত হয়েছে ‘আমার দেশ’র এই অবস্থার জন্যে।”
তিনি বলেন, ‘‘আজকে যে মিডিয়া সংস্কারের কথা শুনছি, এই মিডিয়া সংস্কারের আগে এই মিডিয়ার সম্পাদক ও মালিকদের সংস্কার লাগবে-এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই মিডিয়ার সম্পাদক ও মালিকদের চরিত্র বোঝার জন্য আমি দুইটা উদাহরণ দেই…আবুল আসাদ সাহেব দৈনিক ‘সংগ্রাম’র প্রবীণ সম্পাদক; তাকে নির্মমভাবে নাজেহাল করে তার অফিস থেকে ছাত্রলীগের গুন্ডারা তার দাঁড়ি ধরে নিয়ে গেছে।
“বাংলাদেশের সব সম্পাদকরা তখন কোথায় ছিলেন? কারো মুখে কোনো প্রতিবাদ শুনেছেন সেদিন? নোয়াব কোথায় ছিলে? নোয়াবের কোনো প্রতিবাদ শুনেছেন সেদিন?”
আরেক উদাহরণ দিতে গিয়ে মাহমুদুর বলেন, “মরহুম মঈনুল হোসেন ইত্তেফাকের সম্পাদক ছিলেন। তাকে কীভাবে কোর্ট চত্বরে নাজেহাল করা হয়েছে ছাত্রলীগের নামধারী কতগুলো নিকৃষ্টশ্রেণির মহিলা…তাকে যেভাবে অপমান করেছে কোর্টের মধ্যে- তার প্রতিবাদ শুনেছেন নোয়াবের মুখে? তার প্রতিবাদ করেছে সম্পাদক পরিষদ?
“তাহলে এদের বিরুদ্ধেই তো আমাদের আওয়াজ তোলা উচিত; এই মালিকদের বিরুদ্ধে, এই সম্পাদকদের বিরুদ্ধে, সারা জাতির আওয়াজ তোলা উচিত। কারণ এই মিডিয়া গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোসরের কাজ করেছে।”
‘আমার দেশ’ সম্পাদক বলেন, “হাসিনার ফ্যাসিবাদ যে এতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, তার পেছনে যেমন ব্যুরোক্রিসির ভূমিকার ছিল, পুলিশের ভূমিকা ছিল, সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল, ব্যবসায়ীদের ভূমিকা ছিল; তেমনই মিডিয়ারও ভূমিকা ছিল- এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
“সংবাদ সম্মেলনের নামে মিডিয়ার সম্পাদকরা নির্লজ্জ তেলবাজির প্রতিযোগিতা- আমরা দেখেছি। তাতে আপনাদের সাংবাদিক হিসেবে নিজেদের ছোট হয়ে যাওয়া উচিত। এটা ভাবা যায় না- আমার তো লজ্জা লাগতো ভাই বিদেশে বসে এসব দেখে।”
‘আমার দেশ’র বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।