“পুনর্নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে খাতা নতুন করে দেখা বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না। সব প্রশ্নের বিপরীতে পাওয়া নম্বর ঠিকভাবে যোগ করা হয়েছে কি না তা যাচাই করা হয়।”
Published : 09 Nov 2024, 12:01 AM
চলতি বছরের এইচএসসি ও আলিমের ১ লাখ ৯২ হাজার ৪৮০ জন পরীক্ষার্থী ৫ লাখ ১ হাজার ২৯৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণ বা রিভিউয়ের আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ঢাকা বোর্ডে। আর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন কম পড়েছে আলিম পরীক্ষার্থীদের।
এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৬ শিক্ষার্থী ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষার ৭ হাজার ৮১৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন ২ হাজার ৭১৪ জন।
বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণ আবেদনের পরিসংখ্যান হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এবার এইচএসসি ও আলিমের ১ লাখ ৯২ হাজার ৪৮০ জন পরীক্ষার্থীর পক্ষ থেকে মোট ৫ লাখ ১ হাজার ২৯৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা হয়েছে।”
“কোনো কোনো শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ের খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। তাই আবেদনকারী পরীক্ষার্থীর চেয়ে খাতার সংখ্যা বেশি,” যোগ করেন তিনি।
এদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেপায়েত উল্লাহ শুক্রবার বলেন, “কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৫ হাজার ৯০৮ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষার ৬ হাজার ৮২২টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।”
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খাতা পুনর্নিরীক্ষণ শেষে আগামী ১৪ নভেম্বর ফল প্রকাশ করা হবে।”
খাতা পুনর্নিরীক্ষণের প্রক্রিয়ার বর্ণনা করে তিনি বলেন, “পুনর্নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে খাতা নতুন করে দেখা বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না। সব প্রশ্নের বিপরীতে পাওয়া নম্বর ঠিকভাবে যোগ করা হয়েছে কি না তা যাচাই করা হয়।”
প্রতি বছরই এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরীক্ষার্থীরা তা পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ পান। ফল প্রকাশের পরের এক সপ্তাহ নির্ধারিত ফি দিয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের সুযোগ থাকে। মূল ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
গত ১৫ অক্টোবর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর দিন অর্থাৎ ১৬ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ শিক্ষার্থীরা খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পেরেছিলেন। বাংলা, ইংরেজির মত যে বিষয়গুলোতে দুইটি পত্র রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে দুই পত্রের খাতাই পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে হয়েছিল।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে শুধু ওই বিষয়গুলোর ফল পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ ছিল। পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় যে বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল সে বিষয়গুলোতে ফল পুনর্নিরীক্ষণ করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। অন্যান্য বোর্ডগুলোতে পরীক্ষা শুরু হলেও বন্যার কারণে ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়নি। পরে ৯ জুলাই থেকে এ বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয়।
এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ১৮ জুলাই থেকে সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
পরে গত ২০ অগাস্ট সচিবালয়ে ঢুকে ‘পরীক্ষার্থীদের’ আন্দোলনের জেরে বাতিল করা হয় স্থগিত পরীক্ষাগুলো। বাতিল হওয়ার বিষয়গুলো মূল্যায়ন হয় এসএসসির ফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে।
বাকি আটটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, যুক্তিবিদ্যা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ভুগোল প্রথম পত্র, উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রথম পত্র, আরবি প্রথমপত্র ও পালি প্রথম পত্র পরীক্ষায় বসেছিলেন।
তবে এ বিষয়গুলোর মধ্যে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা বন্যার কারণে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দেননি।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
এ বছর ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে থেকে উত্তীর্ণ হন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন।
কোন বোর্ডে কত আবেদন
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে, ঢাকা বোর্ডে সর্বোচ্চ ৫৯ হাজার ৬৭৮ জন পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৮০ হাজার ৬০টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
আর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের সবচেয়ে কম আবেদন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা আলিম পরীক্ষার্থীদের। ২ হাজার ৭১৪ জন আলিম পরীক্ষার্থী ৭ হাজার ৮১৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন সিলেট বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা। এ বোর্ডের ৬ হাজার ৩০৬ জন পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ৬৯টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডের ২৪ হাজার ২২১ জন পরীক্ষার্থী ৬৬ হাজার ৫৮টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
এর পরের অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বোর্ডের ২২ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থী ৬৮ হাজার ২৭১টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা কুমিল্লা বোর্ডের ২১ হাজার ৬১৪ জন পরীক্ষার্থী ২১ হাজার ৬১৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর ময়মনসিংহ বোর্ডের ১৮ হাজার ৬৯৯ জন পরীক্ষার্থী ৪৬ হাজার ২৪১টি খাতা, রাজশাহী বোর্ডের ১৫ হাজার ৩৭৮ জন পরীক্ষার্থী ৩৯ হাজার ২৬৩টি খাতা, দিনাজপুর বোর্ডের ১৪ হাজার ৫২৫ জন পরীক্ষার্থী ৩৭ হাজার ৬৩৯টি খাতা এবং বরিশাল বোর্ডের ৭ হাজার ২১ জন পরীক্ষার্থী ২৪ হাজার ২৬৫টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফেল করা ১ হাজার ৩৯৮ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছিলেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডের এক পরীক্ষার্থী প্রথমে প্রকাশিত ফলে আইসিটি বিষয়ে ফেল করলেও পরে পাস করে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। গতবার এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনর্নিরীক্ষণ বা খাতা চ্যালেঞ্জ করে ৫৮৫ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল ১৪ নভেম্বর