পাসের হারে খুব বেশি হেরফের না হলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লম্ফনের পেছনে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভূমিকা দেখছেন অধ্যাপক তপন।
Published : 15 Oct 2024, 11:42 PM
ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) খারাপ ফলের ধাক্কা লেগেছে যশোর ও ময়মনসিহংসহ কয়েকটি বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে; অন্যদিকে ইংরেজির পরীক্ষা না হওয়া এবং আইসিটিতে ভালো ফলের কারণে পাসের হারে এগিয়ে গেছে সিলেট।
ইংরেজির আবশ্যিক দুইপত্র ফলের প্রভাবে সামগ্রিক ফলে পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার।
অন্যদিকে আইসিটির প্রশ্ন ‘কঠিন’ হওয়ার শিক্ষার্থীরা ‘শোচনীয়’ অবস্থার মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন ময়মনসিংহ বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক শামসুল ইসলাম।
মঙ্গলবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে নয় সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।
গতবছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ; তাদের মধ্যে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল।
এই হিসাবে এবার পাসের হারে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন।
পাসের হারের দিক থেকে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শীর্ষ উঠে এসেছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডে এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৩ হাজার ১৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ পাস করেছে।
৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ নিয়ে পাসের হারের দিক থেকে তলানীতে নেমে গেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পরীক্ষা বসেছিল ৭৭ হাজার ৬২১ জন শিক্ষার্থী।
নয় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে আট নম্বরে থাকা যশোর শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২২ হাজার ৫১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ পাস করেছে।
ইংরেজি ও আইসিটির ফল যে উচ্চ মাধ্যমিকে সামগ্রিক পাসের হারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, সে বিষয়টি তুলে ধরে মঙ্গলবার ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হারটা মূলত নির্ভর করে বিশেষ করে ইংরেজি এবং আইসিটির উপরে।
“যেহেতু ইংরেজি এবং আইসিটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে (সিলেটে আইসিটি পরীক্ষা হলেও ইংরেজি হয়নি), সে কারণে পাসের হার স্বাভাবিক সময়ের মত সকল বিষয়ে পরীক্ষা দিলে যেরকমটি হত, তেমনটি আছে।”
একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার আগে নয় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ৭টি পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর মধ্যে আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটির পাঁচপত্রের পরীক্ষা দিয়েছে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা।
এক্ষেত্রে মানবিকের শিক্ষার্থীরা নৈর্বাচনিক বিষয় যুক্তিবিদ্যার দুইপত্রের, বিজ্ঞানে পদার্থ বিজ্ঞানের দুইপত্রের এবং ব্যবসায় শিক্ষায় হিসাব বিজ্ঞানের দুইপত্রের পরীক্ষা দিয়েছে।
অন্যদিকে বন্যার কারণে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সিলেটের শিক্ষার্থীরা বসতে পেরেছে মাত্র তিন পত্রের পরীক্ষায়। আবশ্যিক বিষয়ের মধ্যে তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কেবল আইসিটির পরীক্ষা দিতে পেরেছে।
অন্য ৮ বোর্ডের মত সিলেটের মানবিকের শিক্ষার্থীরা নৈর্বাচনিক বিষয় যুক্তিবিদ্যার দুইপত্রের, বিজ্ঞানে পদার্থ বিজ্ঞানের দুইপত্রের এবং ব্যবসায় শিক্ষায় হিসাব বিজ্ঞানের দুইপত্রের পরীক্ষা দিয়েছে।
ছয়টি করে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার কারণে শিক্ষা বোর্ডগুলো সাবজেক্টে ম্যাপিং নীতিমালা অনুযায়ী ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল তৈরি করেছে।
এক্ষেত্রে এবার শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তার ফলাফলের সঙ্গে অন্য বিষয়গুলোতে তাদের এসএসসির ফল যোগ করা হয়।
আর যারা মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে এসে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালা অনুযায়ী এইচএসসির নৈর্বাচনিক বিষয়ের বিপরীতে এসএসসির আবশ্যিক বিষয়ের ফল বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যশোর বোর্ডের সব বিভাগের জন্য আবশ্যিক পাঁচ পত্রের মধ্যে বাংলার দুটিতে ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ইংরেজির দুটিতে ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আইসিটির একটিতে ৮৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
ময়মনসিংহ বোর্ডে বাংলায় ৯৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও ইংরেজিতে ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং আইসিটিতে ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
চট্টগ্রাম বোর্ডে বাংলার দুইপত্রে ৯০ শতাংশ ও আইসিটির একপত্রে ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও ইংরেজিতে পাস করতে পেরেছে ৬৯ ভাগ শিক্ষার্থী। এই বোর্ডে সামগ্রিক পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
সাবজেক্ট ম্যাপিং কীভাবে
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০০০ সালে পরীক্ষা ছাড়াই এবং পরের বছর কম বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছিল সরকার।
ওই সময়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতির একটি নীতিমালা করা হয়েছিল। এবার আন্দোলনের কারণে সব পরীক্ষা না হওয়া সেই আদলে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ফলাফর প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন সরকার বলেন, সিলেট ছাড়া বাকি বোর্ডগুলোতে সাতটি পত্রের পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষার ফলাফল নেওয়া হয়েছে এবং বাকি ছয় বিষয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি তাদের এসএসসির ফলাফল যোগ করা হয়েছে।
যারা বিভাগ পরিবর্তন করছে, তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে মহামারীর সময় পরামর্শক কমিটির করা নীতিমালা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
“মাধ্যমিকে যে সায়েন্সে ছিল, সেখানে সে যে বিষয়গুলো পড়েছে, সেই বিষয়গুলো এখানে (উচ্চ মাধ্যমিকে) নেই। এখানে ইলেকটিভ বিষয় বলে যে তিনটা থাকে, সেই ইলেকটিভ তিনটা বিষয়ের ক্ষেত্রে সায়েন্সে (আবশ্যিক বিষয়ে) যে নম্বর পেয়েছে, ওখানে আর্টসে গিয়ে সে বিষয়গুলো নিয়েছে, সেটাতে কনভার্ট হয়ে গেছে।
“অর্থাৎ এসএসসিতে সে সায়েন্সে যে নম্বরটা পেয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টসে গিয়ে সেই নম্বরটা (নৈর্বাচনিক বিষয়ের মধ্যে) ম্যাপিং হয়ে গেছে।”
এর ব্যাখ্যায় আরেক প্রশ্নে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি বলেন, “যার এসএসসিতে সায়েন্স ছিল, উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে সে গ্রুপ পরিবর্তন করেছে, তার এসএসসির সায়েন্সের বিষয়গুলোকেই সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গিয়ে প্রযোজ্য হয়ে গেছে। কিন্তু সায়েন্সের ছেলেমেয়ে যারা সায়েন্সে ছিল, তাদের আর সমস্যা হয়নি।”
গতবারের তুলনায় পাসের হারে খুব বেশি হেরফের না হলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লম্ফনের পেছনেও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভূমিকা দেখছেন অধ্যাপক তপন।
তিনি বলেন, “যে ছেলেটা মাধ্যমিকে সায়েন্সে জিপিএ-৫ পেয়েছে, সে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে যখন মানবিকে চলে গেছে, তখন তার ওই সাবজেক্টের জিপিএ-৫ হয়ে গেছে। সেজন্য জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। মানবিক হোক, ব্যবসায় শিক্ষায় হোক, সেই গ্রুপে গিয়ে তার বেড়ে গেছে।”
আরেকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ধরুন, এসএসসিতে যে কেমিস্ট্রিতে জিপি-৫ পেয়েছিল, এখন সে মানবিকে গিয়ে পৌরনীতিতে ওই জিপিএ-৫ হয়েছে। এই সুবিধাটা সে পেয়েছে।”
সিলেট সেরা যেভাবে
অন্য সময়ে পিছিয়ে থাকলেও এবার পাসের হারের দিক থেকে সব সাধারণ শিক্ষাবোর্ডকে পেছনে ফেলে সেরা হয়েছে সিলেট বোর্ড। সারাদেশে সামগ্রিক পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশের বিপরীতে এই বোর্ডের পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
গত বছর সিলেটে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারীর আগের বছরগুলোতে সিলেট বোর্ডের পাসের হার ছিল ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৭২ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বন্যার কারণে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলের আগে মাত্র তিনটি পরীক্ষায় বসতে পেরেছিল সিলেটের শিক্ষার্থীরা। অন্য সাধারণ বোর্ডের শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন সাতটি পরীক্ষা।
কম পরীক্ষায় বসার কারণে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ‘সুবিধা’ পেয়েছে মত দিয়ে অধ্যাপক তপন বলেন, “আমরা শুধু ছয়টা পত্রের পরীক্ষা নিতে পারিনি। এর মাধ্যমে তাদের রেজাল্ট হয়েছে। আমাদের সিলেট অঞ্চলে সাতটা পরীক্ষা হয়নি। সেখানে তিনটা বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে।
“সুতরাং সিলেটে ১০টা বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের বেনিফিট পেয়েছে। আর অন্য বোর্ডে ছয়টা পত্রের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের সুবিধা পেয়েছে।”
সিলেটে পাসের হার
বছর |
পাসের হার |
২০২৩ |
৭১.৬২% |
২০২২ |
৮১.৪০% |
২০২১ |
৯৪.৮০% |
২০২০ |
১০০% |
২০১৯ |
৬৭.৫% |
২০১৮ |
৬২.১১% |
২০১৭ |
৭২.৩% |
২০১৬ |
৬৮.৫৯% |
২০১৫ |
৭৪.৫৭% |
২০১৪ |
৭৯.১৬% |
২০১৩ |
৭৯.১৩% |
২০১২ |
৮৫.৩৭% |
২০১১ |
৭৫.৬৮% |
২০১০ |
৭৬.১২% |
২০০৯ |
৭৩.৯৬% |
২০০৮ |
৭১.১৭% |
সিলেটের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভালো করার বিষয়টিও তুলে ধরেন ওই শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল। আইসিটিতে এই বোর্ডের ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল গ্রুপের একটা কমন বিষয় আইসিটি। এখানে পাসের হার বেশি। এই বেশি হওয়াতে দেখা যায়, এজন্য আমাদের জিপিএ-৫ ও বাড়ছে। আইসিটি বিষয়টাতে মানবিকেও পাসের হার বেশি, সে জন্য টোটাল পাসের হার বেড়ে গেছে আর কি।”
মানবিকের শিক্ষার্থীরা এবার আইসিটিতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সে কারণে সামগ্রিকভাবে পাসের হার বেড়েছে।”
মানবিকের ফল ভালো হওয়ার কথা তুলে ধরে অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, মানবিকের প্রায় ৮৬ শতাংশ পাস করেছে এবার। মানবিকের ক্ষেত্রে আইসিটি পরীক্ষায় পাস করে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
ইংরেজি-আইসিটির ধাক্কা
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আবশ্যিক বিষয়ের মধ্যে ইংরেজিতে বেশ খারাপ করায় যশোর এবং ইংরেজি-আইসিটি মিলিয়ে দুই বিষয়ের কারণে পিছিয়ে গেছে ময়মনসিংহ বোর্ড।
বিষয়ভিত্তিক হিসাবে, যশোরে যে সাতটি পত্রের পরীক্ষা হয়েছে, তার ছয়টিতে পাসের হার প্রায় ৮৭ থেকে শুরু করে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু ইংরেজিতে এই হার মাত্র ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ইংরেজিতে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মর্জিনা আক্তার।
ফলাফল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “করোনার কারণে দেড় বছর আমাদের শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাসে যেতে পারেনি। সরাসরি পাঠদান করা যায়নি। সে কারণে ইংরেজিতে যে লার্নিং গ্যাপ সেটা এখনও আমরা পূরণ করতে পারিনি পুরোপুরিভাবে। এই কারণে আমাদের গতবারের তুলনায় ফলাফল একটু খারাপ হয়েছে।”
ময়মনসিংহ বোর্ডে ইংরেজিতে ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং আইসিটিতে ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
মূলত আইসিটি বিষয়ের কারণে ময়মনসিংহ বোর্ডের ফলাফলে তলানীতে নেমে আসার কথা তুলে ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক শামসুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যে প্রশ্নটা বিশেষ করে আইসিটিতে, অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন হয়েছিল। এটা নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় সময় আমাদের বাচ্চাদের একটা অসন্তুষ্টি, রিপারকেশান ছিল।
“আমাদের হেড এক্সামিনারও একই মত ব্যক্ত করছেন যে, এই প্রশ্নটা আসলে বেশ কঠিন। সেটা আমদেরকে একটা বেশ পিছিয়ে দিয়েছে।”
এর সঙ্গে জাতীয়ভাবে ‘স্বীকৃত সমস্যা’ ইংরেজি যুক্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, “ইংরেজিতে আমাদের ৭৭ শতাংশ পাস করেছে। এই দুটোতে শতকরা হারে কমে যাওয়ার কারণে টোটাল পার্সেন্টেজের ওপর, ফলাফলের উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে।”
ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বসে এ থেকে উত্তরণের পথ বের করার কথা বলেছেন ময়মনসিংহ ও যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা।
খারাপ ফলাফলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে শহীদ নজরুল ইসলাম কলেজের আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক হুমায়ুন রশিদ বলেন, “প্রতি বছর যে প্রশ্নপত্র হয়, তা সিলেবাসের আলোকেই হয়। এবারও তাই হয়েছে।
“কিন্তু যে প্রশ্নটা হয়েছে, বিজ্ঞান ও কমার্সের জন্য ঠিক হলেও মানবিকের জন্য ঠিক ছিল না। সে কারণে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ক্ষোভও প্রকাশ করেছে।”
ব্যবহারিক কাজ করার সুযোগ কম থাকাকেও শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ চিহ্নিত করে তিনি বলেন, “ব্যবহারিক চর্চা না করতে পারলে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হতে পারবে না।
“এবং গ্রামাঞ্চলে ব্যবহারিক ক্লাস করানোর মত কোনো ব্যবস্থা নাই। ব্যবস্থা যদি হয়, তাহলে আইসিটির ফেলের সংখ্যা কমে আসবে। আর প্রশ্নপত্র সিলেবাসের আলোকে করতে হবে।”
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ইলিয়াস আহমেদ]