কোভিডের পর ২০২৩ সালে প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। এক বছর না যেতেই ছন্দপতন ঘটে পরীক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমে।
Published : 16 Oct 2024, 01:29 AM
এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফল শিক্ষাবোর্ডগুলোর কর্তা ব্যক্তিদের কাছে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা; বলছেন, পাশ করা শিক্ষার্থীদের আসল পরীক্ষা হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও উচ্চ শিক্ষার অধ্যয়নকালে।
তারা বলেছেন, চলতি বছর যে পদ্ধতিতে এইচএসসি ও সমমানের ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে এতে ফলাফলের ‘ভালো-মন্দ বিচার’ করা সম্ভব না। সচরাচর পরীক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ভিন্ন পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করায় আগের মত তুলনার সুযোগ নেই।
আর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল তৈরি করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি অংশ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে পরীক্ষায় না বসায় সেগুলো থেকে তারা কতটা শিখেছেন সেটির যাচাই হয়নি। এর নেতিবাচক প্রভাব থাকবে, যা কাটাতে ভর্তিসহ সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ উৎড়াতে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক শিক্ষকের।
কোভিড মহামারীর পর ২০২৩ সালে প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। এক বছর না যেতেই পরীক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার বাধার মুখে সরকার পতনের আন্দোলনের তীব্রতায়। এ বছর সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের কারণে।
পরে যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসির নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এবার ফল মূল্যায়ন করা হয়।
সেই ফল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজেদের অফিসে বসে প্রকাশ করেন। ঢাকায় সমন্বিত ফল প্রকাশ করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
এইচএসসি ও সমমানের এই পরীক্ষায় এবার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।
আগের বার ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ; জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী।
এর আগে ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, সেই পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
সে তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে, আর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও অন্যান্য বারের চেয়ে তুলনামূলক কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহম্মদ আলী জিন্নাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একাডেমিক পঞ্জিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে আর বোর্ড ও মন্ত্রণালয় নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা নিয়ে ফল দেবে। তবে এবার সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার ফলে শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
“পাশের হার কমার একটা কারণ হতে পারে মাধ্যমিকে কোনো সাবজেক্টে খারাপ করে থাকলে সঙ্গত কারণে এবারও সেটাতে খারাপ করবে। কিন্তু যেটাতে ভালো হয়েছিল সেটা ভালোকে আরও বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে জিপিএ-৫ এর পরিমাণটা বেড়ে গেছে।”
সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তু না পড়েই ফল ভালো বা মন্দ যেটাই হোক না কেন তা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র তৈরিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত এই অধ্যাপকের।
অধ্যাপক জিন্নাহ বলেন, “যেমন ধরেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাদের। সেখানে তো এ ধারায় তাদের (শিক্ষার্থীদের) নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী পরীক্ষা নেবে। না পড়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হলেও ভর্তি পরীক্ষায় তা বিপদে ফেলবে।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলছেন, সব বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়ে ফল তৈরি করায় তা পরিসংখ্যানগতভাবে ভালো হলেও শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে সেটা এবার বলা যাচ্ছে না।
“বেশি জিপিএ-৫ পেলে অভিভাবকদের প্রত্যাশা বেড়ে যায় শিক্ষার্থীদের উপর। আমাদের সময় কেউ স্টার মার্কস পেলে নিশ্চিত হওয়া যেত সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। এখন জিপিএ-৫ পেলেও বোঝার সুযোগ নাই সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে পারবে কি না।
“কারণ তারা শিখছে না এখন। এই রেজাল্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভালো ফিডব্যাকও দেওয়া যাচ্ছে না, সে পিএচডি করবে না কি অন্যকিছু।”
শিক্ষার্থীদের যথাযথ অগ্রগতির জন্য মুখস্ত নির্ভর পড়াশোনা থেকে বেড়িয়ে এসে দক্ষতা ভিত্তিক পড়াশোনা প্রণয়নের পরামর্শ অধ্যাপক কায়কোবাদের।
“কারণ মুখস্ত বিদ্যাটা বেশিদিন থাকে না। এক মাস, দুই মাস পরে তারা ভুলে যাবে। কিন্তু দক্ষতা অর্জন করলে সেটা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এই যে এবার পরীক্ষা হলো না, সেটা মোটেও ঠিক হলো না। পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা তাও কিছু শিখত।”
লেখক-প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা যে ফলাফল করছে এতে তাদের শিক্ষিত হওয়ার যথার্থ চিত্র উঠে আসে না। কারণ শ্রেণিকক্ষ থেকে পড়াশোনা এখন কোচিংয়ে চলে এসেছে।
“এই পরীক্ষা দিয়ে আসলে প্রকৃত মেধা বোঝা যায় না। সিস্টেমটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করি। সহজ (সাবজেক্ট ম্যাপিং) কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হলে পরবর্তীতে তাদের চাকরির ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।”
উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হারে এবার ৯ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিলেট। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২০২৪ সালে সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও লাফ দিয়েছে। এবার ৬ হাজার ৬৯৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে; আগের বার পেয়েছিল শুধু ১ হাজার ৬৯৯ জন।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুন চন্দ্রপাল বলছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীরা ভালো করায় এবার তাদের ফল ভালো হয়েছে।
বন্যার কারণে এবার সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অন্যান্য বোর্ডের পরে শুরু হয়েছে। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকার পতনের ঘটনাপ্রবাহে বারবার পরীক্ষা স্থগিত হয়। শেষে শিক্ষার্থীদের দাবিতে পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এর ফলে সিলেটে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কেবল তিনটি করে বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক অরুন বলেন, “আইসিটিতে পাশের হার বেশি হওয়াতে দেখা যায়; এজন্য আমাদের জিপিএ-৫ও বাড়ছে। আইসিটি বিষয়টাতে মানবিকের পাসের হার বেশি, যার জন্য টোটাল পাসের হার বেড়ে গেছে আরকি। অন্য সময় মানবিকের শিক্ষার্থীরা ভালো করত না এটাতে।”
তবে ১১ বোর্ডের মধ্যে এবার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক শামসুল ইসলামের মতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ইংরেজিতে কম শিক্ষার্থী পাস করায় সার্বিকভাবে তাদের পাসের হার কম এসেছে।
অধ্যাপক শামসুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যে প্রশ্নটা বিশেষ করে আইসিটি সেটা অন্য বোর্ডের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন হয়েছিল। এটা নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় সময় আমাদের বাচ্চাদের একটা অসন্তুষ্টি, প্রতিক্রিয়া ছিল। ইংরেজিতেও পারসেন্টেজ কম আসছে।”
এ অবস্থা আগামিতে কাটিয়ে উঠতে যেসব বিষয়ের ফল খারাপ হয়েছে বোর্ড চেয়ারম্যান সেসব বিষয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বসবেন বলে তুলে ধরেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
“বিশেষ করে ইংরেজি ও আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে বসবেন। তাদের মতামত শুনবেন। চিহ্নিত করে সামনে যাতে ভালো করা যায় সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এবার বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। ৪ হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, ২০২৩ সালে পেয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৩ জন।
এবার তাদের পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেজাল্ট ভালো হয়েছে। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেছে, শিক্ষকরা ভালো পড়িয়েছি। যে কয়টা বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি সেগুলোর ফল এসএসসি থেকে নেওয়া হলো সেকারণেও ভালো হতে পারে।”
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল স্বাভাবিক হয়েছে। যে পরীক্ষাগুলো বাতিল হয়েছে সেগুলো পাশের হারে প্রভাব ফেলে না।
“কারণ পাস, ফেইল নির্ভর করে ইংরেজি ও আইসিটিতে। সে পরীক্ষাগুলো তো হয়েছে। সে কারণে গতবারের কাছাকাছি আছে পাসের হার।”
তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এসএসসিতে যারা বিজ্ঞানে ছিল তাদের অনেকে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় চলে এসেছে। এর ফলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এবার ওইসব শিক্ষার্থীর ফল ভালো হয়েছে।
“কারণ ওই বিষয়গুলোতে মেট্রিকে তার রেজাল্ট ভালো ছিল। এরফলে জিপিএ-৫ বেড়ে গেছে। উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫ থেকে ৮০’র মধ্যেই থাকে পাশের হার।”
ছন্দহীন ৫ বছর, সংস্কার কীভাবে?
সবশেষ পাঁচ বছর ধরে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাকে সব কিছুর উপরে রেখে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে এমন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে যাতে সব সময় সচল থাকে।
কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০ সালে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে সেবার মূল্যায়ন করা হয়। পরের বছর মহামারীর কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিলম্বিত পরীক্ষা হয়েছিল।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারী আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়। ওই বছরও পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হয়েছিল।
তবে কোভিড মহামারীর পর ২০২৩ সালেই প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন্নাহ বলছেন, শিক্ষাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। দূরবর্তী প্রভাবের কথা বিবেচনা করতে হবে।
“যে অঞ্চলগুলোতে বন্যা হয়েছে, যারা অসুস্থ হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। পড়াশোনার আন্তর্জাতিক যে ট্রেন্ড সেটার সঙ্গে সমন্বয় না রেখে যদি আমরা যদি আমাদের মত করে নেতিবাচক পরিকল্পনা নেই তাহলে সেটা সূদুরপ্রসারী ফলাফল আনবে না।
“এমন সংস্কার হোক যাতে যত সমস্যাই আসুক না কেন শিক্ষা সচল থাকবে, শিক্ষার্থীরা নিয়মকানুন মেনে পড়াশোনা করবে। চাহিদাভিত্তিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষা করতে হবে।”
মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনার কাজে যুক্ত থাকা কবি-প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন বলছেন, শিক্ষাক্রম-২২ এর প্রয়োগ ধীরে ধীরে করে অভ্যস্ত করতে পারলে দেশের শিক্ষা পদ্ধতি একটা নতুন পর্যায়ে যেতে পারত।
“এমন পদ্ধতি করতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা সারা বছরই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে থাকবে। বছর শেষে পরীক্ষা তো হবে, কিন্তু সে পরীক্ষা যদি কোনো কারণে না হয় তাহলেও তার কোনো সমস্যা হবে না।“
ফল নিয়ে খুঁতখুত শিক্ষার্থী-অভিভাবকের
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করায় আশানুরূপ ফল পেলেও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে ‘বুলিংয়ের’ শিকার হওয়ার শঙ্কা করছেন।
নরসিংদী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র উজ্জল সরকার উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে। তার ভাষ্য, কিছু শিক্ষার্থীর কারণে সরকার পরীক্ষা বাতিল করায় বাকিদেরও সমাজে এক ধরনের মন্তব্য শুনতে হচ্ছে।
“ফেইসবুকে অনেকে লিখতেছে অটো। জিপিএ-৫ পেলেও সবাই খুব একটা মূল্য দিচ্ছে না এটাকে। পরীক্ষা হলে এমনটা হত না।”
উজ্জলের বাবা তরুণ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেজাল্ট ভালো হয়েছে; এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা নিতে পারে নাই ঠিক আছে। কিন্তু পরে তো পরিস্থিতি ভালো হয়ে আসছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হলেও পরীক্ষাটা নিয়ে নিতে পারত। এখন তাদের নিয়ে সবাই সমালোচনা করবে।”
মিরপুররের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিকের শিক্ষার্থী জিনিয়া আক্তার জিপিএ-৫ নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও সব বিষয়ের পরীক্ষা না হওয়ায় উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনায় ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথা বলছেন।
“পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট পাওয়ার আনন্দ অন্য রকম। তখন নিজের মূল্যায়ন করা যায়।”
আরও পড়ুন
ইংরেজি-আইসিটির ধাক্কা এইচএসসির ফলে, কম পরীক্ষার 'সুবিধা' পেল সিলেট
এইচএসসি: পুনঃনিরীক্ষার আবেদন যেভাবে
উচ্চ মাধ্যমিকে পাস ৭৭.৭৮%, জিপিএ-৫ এ উল্লম্ফন
এইচএসসি: চট্টগ্রামে এবারও ছেলেদের পেছনে ফেলল মেয়েরা
এইচএসসি: চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফলে 'সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের' প্রভাব
যশোরে ফল বিপর্যয় ইংরেজির কারণে, শতভাগ ফেল ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান