“কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করে থাকে সেটা আসলে প্রতিহত করা খুবই কঠিন, শনাক্ত করাও অনেক কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করলে সেটা আসলে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না।”
Published : 21 Dec 2023, 12:04 AM
নতুন লোকোমোটিভ ও কোচের সঙ্গে নতুন লাইন, সেতু আর আইকনিক স্টেশনের মত রেলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। যাতায়াতে নিরাপদ এ বাহনকে আরও সহজ যোগাযোগের মাধ্যম করার চেষ্টার মধ্যেই সেটি এখন হয়ে উঠছে ‘অনিরাপদ আর আতঙ্কের কারণ’।
এক দশক আগে যে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে রেল, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মুহূর্তে সেটি আবারও ফিরেছে। রেল লাইন তুলে বা কেটে ফেলা ও ট্রেনে আগুনের মত ভয়ানক সহিংসতা দেখছে সাধারণ মানুষ।
মাইলের পর মাইল চলে যাওয়া রেলপথে এসব নাশকতা ঠেকানোর কোনো উপায় জানা নেই রেল কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, শুধু জনবল দিয়ে এই দীর্ঘ পথে নাশকতা ঠেকানো কঠিন।
রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রেলপথ সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও নিরাপত্তায় তেমন কোনো প্রযুক্তি নেই। পুরোপুরি জনবল নির্ভর এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব কার্যকরও নয়।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর বিএনপি ও সমমনারা হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে। এর মধ্যে সড়কপথের যানবাহনের পাশাপাশি নাশকতা চালানো হচ্ছে রেলেও।
গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলপথে লাইন কেটে ফেলায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। ওই রাতেই নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিসপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা চলে। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধে নাশকতাকারীরা পালিয়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ‘সীমান্ত এক্সপ্রেস’।
মঙ্গলবার ভোরে নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তিনটি বগি পুড়ে গেলে মারা যান মা ও শিশুসহ চারজন।
সেদিনই কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রেলসেতুর লাইনের ১০টি হুক বোল্ট খুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। বড় এই ঘটনাগুলো ছাড়াও ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বেশ কয়েকবার ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুড়েছে বগি।
রাষ্ট্রীয় এই সম্পদের নিরাপত্তায় অনেকে দেশে উন্নত প্রযুক্তি থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এমনকি রেলের কামরায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ এখনও আলোচনার টেবিলে।
দেশের ৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তা পুরোটাই জনবল নির্ভর। সিগন্যালিং ব্যবস্থাও উন্নত নয়।
গত ২৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কন্টেইনারবাহী একটি ট্রেন সিগন্যাল ঠিকমত দেখতে না পেয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দিলে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকান রেইলরোডস’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ ৪০ হাজার কিলোমিটার রেললাইন সুরক্ষিত রাখতে স্মার্ট সেন্সর, লেজার ও গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) ব্যবহার করা হয়। কোনো নাশকতা, প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট কোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে এগুলো আগাম বার্তা দেয়।
জিপিআর মূলত সবচেয়ে দ্রুত ও কার্যকরী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক জরিপ কৌশল। রেলপথের নুড়ি বা পাথরের আস্তরণের লেভেল পরিমাপ, কোথাও গর্ত বা নিচু হয়ে গেলে এবং লাইনে গঠনের কোনো পরিবর্তন বা ত্রুটি ঘটলে জিপিআর প্রযুক্তিতে জানা সম্ভব। সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় রেললাইনে এসব ত্রুটি জানা কঠিন।
এছাড়া চালকের গুরুতর ভুলের ক্ষেত্রে ‘পজিটিভ ট্রেন কন্ট্রোল’ (পিটিসি) প্রযুক্তিও রয়েছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত গতির কারণে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ কিংবা লাইনচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। অন্য লাইনে ঢুকে পড়লেও এর মাধ্যমে সিগন্যাল পাওয়া যায়। তবে রেলপথের কোনো ত্রুটি কিংবা ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি ব্যাপারে এটি কোনো কাজ করে না।
বাংলাদেশে রেললাইন কেটে বা তুলে ফেললে স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাওয়ার কোনো প্রযুক্তি রয়েছে কিনা, জানতে চাওয়া হয়েছিল রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশনস) এ এম সালাহ উদ্দীনের কাছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই কর্মকর্তা বলেন, “এমন কোনো প্রযুক্তি আমাদের নেই।”
এমনকী ট্রেনের ভেতরে চালক (লোকো মাস্টার) ও ট্রেনের অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে কার্যকর কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই ট্রেনগুলোতে। তারা মোবাইল ফোনে নিজেদের মধ্যে নির্দেশ আদান প্রদান করে।
সর্বশেষ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি মঙ্গলবার ভোরে নাশকতার শিকার হলে অ্যাটেনডেন্টরা ট্রেনের লোকো মাস্টারকে কোনো তথ্য দেননি। ঘটনাক্রমে আগুন দেখতে পেয়ে ট্রেনের পরিচালক মোবাইল ফোনে লোকো মাস্টারকে ট্রেনে থামাতে বলেন।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক শামসুল হক মনে করেন, বাংলাদেশের হাজার কোটি টাকার রেলকে রক্ষায় কিছু সহজ প্রযুক্তির ব্যবহার থাকা উচিৎ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।
“আর আমাদের রেললাইনের আশপাশে সব সময় যে ১৪৪ ধারা জারি থাকে, সেই বিষয়গুলো কার্যকর করে রেললাইনে সাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, উন্নত দেশের ট্রেনগুলো উচ্চগতির। সেখানে লাইনের সামান্য বিচ্যুতিও অনেক বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই প্রথমত তারা রেললাইন এলাকায় যাতে কেউ ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। বেশ কিছু অটোমেটিক ডিটেকশন সিস্টেম ইন বিল্ট করে রাখে।
এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের রেললাইনগুলো রক্ষায় সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই কিন্তু রেললাইন এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। কিন্তু আমরা সেইসব আইন ভুলে বসে আছি।
“আমাদের মত অনেক দেশকে অন্তত মেরামতি কাজটা যেন সময়মত হয়, সেজন্যও সিসি ক্যামেরা বেইজড ‘রিমোট সার্ভিলেন্সে’র ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কারো ফোন পেয়ে প্রথমে একটা টিম পাঠালাম, তারপরে লজিস্টিকস এলো, এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ট্রেন যেহেতু সময় মেনে চলে, সে কারণেও সাড়া দেওয়ার সময়টুকু (রেসপন্স টাইম) কমানোর জন্য হলেও এই সিসি ক্যামেরার নজরদারি ব্যবস্থাটা ভালো।”
শামসুল হক বলেন, “আমাদের কামরার ভেতরেও কোনো ক্যামেরা নেই, করিডোরেও কোনো ক্যামেরা নেই। যার কারণে মানুষ কিন্তু এই অ্যাটেম্পটগুলো নিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের রেললাইনটাও অরক্ষিত।
“রেলের অপারেশনটাকে যদি নিরাপদ রাখতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়াতে হবে। আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারির একটা সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে যে একটা প্রকল্প নিয়ে কয়েকটা সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দিলেই হল। কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে তিন শিফটে এর ভিডিওগুলো নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “নজরদারি করলে পরেই কেউ কোনো সন্দেহজনক আচরণ করছে কি না তা যেমন দেখা যাবে, পাশাপাশি কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত সাড়া দেওয়া যাবে। এটা লো কস্ট বাট ভেরি ইফেক্টিভ হতে পারে।
“আমাদের লাইন এলাকায় যেহেতু জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা যায় না, তাই মাটির ওপরে এই ব্যবস্থাগুলো রাখা যায়। সিসি ক্যামেরা দিয়ে ২৮০০ কিলোমিটার রেলওয়েটাকে যদি কাভার করা যায়, স্বাভাবিক সময়েও কিন্তু এটা অনেক কাজে লাগবে। আবার যখন সহিংসতা বাড়বে, তখন এটা নজরদারির পাশাপাশি ক্ষয়-ক্ষতি কমাতেও সাহায্য করবে।”
এই অধ্যাপক জানান, উন্নত দেশে রেলের নিরাপত্তায় অনেকগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর), স্ক্যানারও বলা হয় এগুলোকে।
“নাশকতা ছাড়াও ট্রেন চলতে চলতে লাইনগুলো বিকৃত হয়, ফাটল তৈরি হয়। ওপর থেকে দেখেও অনেকসময় এগুলো বোঝা যায় না। কিন্তু যখন ওটার ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন যাবে, তখন ফলাফলটা ভয়াবহ হতে পারে।
“আমাদের এখানে রেলের এই ত্রুটি শনাক্তকরণ ও মেরামতির পুরো কাজটাই হচ্ছে জনবল নির্ভর। সেটার একটা দুর্বলতা তো আছেই। আর এখন এইসব চাকরিতে যুক্ত হচ্ছেন মাস্টার্স পাস ছেলেরাও। যার কারণে গায়ে-গতরে খাটনির এসব চাকরিতে যোগ দিয়ে কাজের বেলায় তাদের অনেকেই খুব উৎসাহ পান না।”
শামসুল হক বলেন, “ওরা (উন্নত দেশে) একটা ট্রেনের তলায় বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট জুড়ে দিয়ে লাইন দিয়ে ট্রেনটা চালিয়ে নিয়ে যায়। ওই গ্যাজেটগুলো লাইন ঠিক আছে কী না, কোনো ফাটল আছে কী না তা যাচাই করতে পারে। এই টেকনোলজিগুলো থেকে তথ্য নিয়ে ঘটনা ঘটার আগেই তারা ত্রুটিগুলো মেরামত করে ফেলতে পারে। যেখানে বরফ পড়ে অনেকসময় বরফের স্তূপের জন্য ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। সেটার জন্য তারা অনেক জায়গায় কিছু সেন্সর ব্যবহার করে।
“আমাদের এখানে এত হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করছি, কিন্তু নিরাপত্তার ভাবনাটা ভাবা হয়নি। এখন হচ্ছে নাশকতা। পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা কিছুদিন আগেও আতঙ্ক ছড়ায়। তারপর লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই যে লাইনটা উঁচু-নিচু হয়ে থাকে, সেটাতো খালি চোখে ধরা পড়ে না। তাদের ওই মেশিনগুলো আসলে এক ধরনের রোবট। সেগুলো জুড়ে দিয়ে ট্রেনটা চালালে সে বিচ্যুতিগুলো ধরতে পারে।
‘লাইনের অনেক রকম বিচ্যুতি হতে পারে। গেজ কম বেশি হয়, দুটি রেল পাতের মধ্যে উঁচু-নিচু আছে কিনা, পাতে ফাটল আছে কি না, নাট-বল্টু টাইট আছে কি না এ বিষয়গুলোর রিপোর্ট নিয়ে মেইনটেইন করার মানসিকতা গড়তে হবে।”
ট্রেনে সর্বশেষ নাশকতার ঘটনাগুলোর পর নিরাপত্তা বাড়াতে গিয়ে ট্রেনের গতি কমানো হয়, যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো বা ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু তাতে গড়বড় হয়ে যায় রেলের সূচি।
এছাড়া গাজীপুরে রেললাইন কেটে দেওয়ার পরদিন থেকে ‘ট্রলি রান বা অ্যাডভান্স পাইলট’ ব্যবস্থা চালু করে রেলওয়ে। ট্রেন যাওয়ার আগে একটি ইঞ্জিন বা ট্রলি গিয়ে রেল লাইন ঠিক আছে কি না তা দেখে নেয়, যেটিকে অ্যাডভান্স পাইলট সিস্টেম বলা হয়ে থাকে।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে দেশজুড়ে নাশকতার ঘটনায় ওই ‘অ্যাডভান্স পেট্রোলিং ট্রেন’ চালু করা হয়েছিল।
জনবলেও ঘাটতি
রেলওয়ে জেলার ঢাকার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলছেন, তার বিভাগের অধীনে ৭৩৫ কিলোমিটার রেলপথ, ১১১টি স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ৪৭০ জনের একটি দল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ হয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত তার এলাকার ব্যাপ্তি। তার এলাকার আওতায় প্রতিদিন যাতায়াত করে ৫৯ জোড়া ট্রেন। সব ট্রেনে নিরাপত্তার জন্য জনবল মোতায়েন তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আনোয়ার বলেন, “অব্যাহত নাশকতার মুখে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে আনসার মোতায়েন চেয়েছিলাম। সেটা হয়ত কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আর ট্রেনের ভেতরে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম, সেটা করা হচ্ছে। এর বাইরে ট্রেনের বগির ভেতরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথাও বলা হয়েছিল।”
তবে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক সালাহ উদ্দীন বলছেন, ট্রেনের কামরার ভেতরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর আলোচনা হয়েছে; এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, “গত সপ্তায় রেলের লাইন কেটে নাশকতার পর থেকে রেল পুলিশ সতর্ক হয়েছে। ট্রেনে যারা ডিউটি করছেন, তাদের বলা হয়েছে এক জায়গায় বসে না থেকে ট্রেনের এ মাথা থেকে ও মাথা টহল দিতে।”
মঙ্গলবার ভোরে তেজগাঁওয়ে যে ট্রেনটি নাশকতার শিকার হয় তাতে মোটে তিনজন রেল পুলিশ সদস্য ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সেই সংখ্যায় জনবল নেই। আমরা সব ট্রেনে লোক দিতে পারি না।”
আর ৭০০-৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতার ট্রেনে তিন-চারজন পুলিশ সদস্য আসলে যে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না, সেটাও বললেন রেল কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন।
ট্রেনে পরপর নাশকতার পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে দিন-রাত রেললাইনে টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের ওয়েম্যানরা ২৪ ঘণ্টা ট্র্যাক প্যাট্রোলিং করছেন। যার ফলে কোথাও সমস্যা হলে আমরা কিন্তু ডিটেক্ট করতে পারছি। আমাদের কন্ট্রোলরুমে সার্বক্ষণিক সতর্ক দায়িত্বে থাকছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া ঊর্ধ্বতনরাও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।”
তবে পুলিশ সদস্যদের পক্ষে রেললাইন পাহারা দেওয়ার কাজটি কঠিন বলে মনে করেন রেল পুলিশের এসপি আনোয়ার হোসেন।
‘নাশকতা ঠেকানো কঠিন’
বনজঙ্গল কিংবা ফসলের ফাঁকা মাঠ ধরে চলে গেছে রেললাইন। এসব ফাঁকা জায়গাগুলোতে কেউ নাশকতা করতে চাইলে ঠেকানো কঠিন বলে মনে করেন রেল কর্মকর্তারা।
আনোয়ার হোসেন বলেন, “কোথাও কোথাও বনের ভেতর, ফসলের খেতের উপর দিয়ে মাইলের পর মাইল চলে গেছে রেল। আশপাশে কোনো রাস্তাও নেই যে লোকজন পাঠিয়ে সেখানে টহল দেওয়া যাবে। তবে রেলে যে ওয়েম্যানদের নিয়োগ দেওয়া আছে, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে রেললাইনে টহল দেওয়া।
“আমাদের সব কর্মীই সতর্ক হয়ে কাজ করছে। কিন্তু আপনারা জানেন, রেলওয়ের বিস্তার ৩ হাজার কিলোমিটার। এই বিস্তৃত এলাকায় ২৪ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেনের নিরাপত্তার জন্য একেকটি ট্রেনে দুই থেকে চারজন রেল পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকে। একটা ট্রেনের সাত-আটশ যাত্রীর মধ্যে কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করে থাকে সেটা আসলে প্রতিহত করা খুবই কঠিন। সেটা শনাক্ত করাও অনেক কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করলে সেটা আসলে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না।”
রেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সিসি ক্যামেরা ও আনসার মোতায়েনের কথা বলা হচ্ছে রেল পুলিশের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক সালাহ উদ্দীন বলেন, “আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে কিন্তু সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। এরপরেও রেল পুলিশ ও আরিএনবির নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যে চাহিদাগুলো আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করতে উদ্যোগ নেব।”
তবে ট্রেনের বগিতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ এখনও আলোচনার টেবিলে বলে জানান তিনি।
ঢাকা রেলওয়ে জেলায় ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এমন আড়াই থেকে তিনশ এলাকার তালিকা পাওয়া গেছে জানিয়ে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক বলেন, “আনসার মোতায়েনের কথা হচ্ছে, আনসার সদস্যদের পাওয়া গেলে তাদের সেখানে মোতায়েনের চিন্তা করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন-
আগুন বিমানবন্দরে, তবুও তেজগাঁও গেল কেন ট্রেন?
ভোরের মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসেই কেন বার বার নাশকতা
নাশকতা: গতি কমানোর পর রেল সূচিতে গড়বড়
নাশকতা: রেল চালু করল ‘ট্রলি রান’ ব্যবস্থা