ছয়দিন আগেই ট্রেনটি গাজীপুরে নাশকতার শিকার হয়, যাতে একজন মারা গেছে।
Published : 19 Dec 2023, 07:17 PM
“সিগন্যাল ‘ওকে’ করার পর সবুজ পতাকা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি, ছুটে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের একটি বগি থেকে আগুন বের হচ্ছে। ট্রেনটি মূল স্টেশনে ঢোকার আগেই এ দৃশ্য দেখে দ্রুতই সিগন্যাল বাতিল করে দেই।”
হরতালের ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে বিভীষিকা পরিস্থিতি সামলানোর বর্ণনায় বলছিলেন সহকারী স্টেশন মাস্টার পর্বত আলী।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তেজগাঁও স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নেত্রকোণা থেকে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে যায়। এর একটি বগি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক মা, তার শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ।
এদিন দুপুরে তেজগাঁও স্টেশনে পর্বত আলী বলেন, “আগুন দেখে থামার দায়িত্বটুকু পালন না করলে এটা (ট্রেন) সরাসরি কমলাপুর রেলস্টেশনে যেত এবং অন্যান্য বগিগুলোতে ছড়িয়ে পড়ত; সেই সাথে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ত।”
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটি সাধারণত রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে, যা কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় ভোর সোয়া ৪টায়। তবে মঙ্গলবার ট্রেনটি প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে আসে বলে জানান সহকারী স্টেশন মাস্টার পর্বত আলী।
তিনি জানান, ঢাকায় ঢোকার পর বিমানবন্দর স্টেশনে থেমে সর্বশেষ যাত্রী উঠানামা করে। এরপরেই ট্রেনটি ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে অতিক্রম করে।
তখন তেজগাঁও স্টেশন অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে রাখেন সেসময়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা পর্বত আলী।
তিনি বলেন, তার স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস থামার কথা নয়। সে কারণে তিনি ট্রেন অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে প্ল্যাটফর্মে সবুজ পতাকা নিয়ে দাঁড়ান।
“দ্রুতগতিতে আসা ট্রেনটি আউটারে ঢোকার সময় (৪টা ৫৮ মিনিট) দেখি, ট্রেনের একটি বগি থেকে আগুনের সাথে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। দ্রুত কন্ট্রোলরুমে গিয়ে ট্রেন অতিক্রম করার অনুমতি বাতিল করে দেই। ফলে ট্রেনটি মূল স্টেশন থেকে প্রায় ৫শ গজ দূরে গিয়ে থেমে যায়। পরে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের ছ, জ, ঝ নামের বগিগুলো পুড়ে গেছে।”
ট্রেন থামিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসে ফোন করেন জানিয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার পর্বত বলেন, একটি বগিতে প্রথম আগুন দেখলেও পরে দেখি, আরও দুটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে গেছে।
তেজগাঁও স্টেশনে তখন বলাকা কমিউটার ট্রেনের যাত্রীরা অপেক্ষা করছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঘটনার ভয়াবহতা দেখে ওই যাত্রীরাও উদ্ধারে ছুটে যান। পরে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ছুটে আসেন।”
পর্বত আলীর ধারণা, যাত্রীবেশে বিমানবন্দর স্টেশনে নাশকতাকারীরা ওঠে।
“তারা আগুন লাগিয়ে অন্য বগিতে চলে যায়। পরে তারা তেজগাঁও রেলস্টেশনে নেমে যায়।”
পরে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটিকে কমলাপুরে নিয়ে গেলে তেজগাঁওয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুড়ে যাওয়া কোচ তিনটি বদলে দুপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল ও রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় ভোররাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তাতে একজন নিহত এবং লোকো মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে আগামি কয়েকদিনের মধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
মঙ্গলবার রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, “এ পর্যন্ত ২৭০০ আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই একদিনের মধ্যে এই জনবল পেয়ে যাব।”
গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতের দফায় দফায় হরতাল অবরোধে, ঢাকা, সিলেট জামালপুর, জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় বিএনপিকেই দায়ী করে আসছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
তবে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, সরকার পতনে তারা যে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন, তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সরকার নিজেরা নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।