“ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার অস্বাভাবিক ঘটনা রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
Published : 22 Nov 2022, 06:08 PM
ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বর্ণনা করে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছে দীপন স্মৃতি সংসদ।
মঙ্গলবার দীপন স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব ও দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই জঙ্গির সহযোগীদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
রোববার ভরদুপুরে পুরান ঢাকার আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।
শামীম ও সিদ্দিক দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় দীপন স্মৃতি সংসদ ‘স্তম্ভিত, বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আদালতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোনোপ্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যতীত শুধু পিপার স্প্রে ব্যবহার করে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম যানজটপূর্ণ এলাকা থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার অস্বাভাবিক ঘটনা রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
“আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চরম অবহেলা, অসতর্কতা বা সহযোগিতায় প্রশিক্ষিত জঙ্গিগোষ্ঠীর নিখুঁত পরিকল্পনা সহজতরভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় দীপন স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”
কারাবন্দি জঙ্গিরা কিভাবে বাইরে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্ত দাবি করা হয়েছে দীপন সংসদের তরফে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, রোববার দুজন দুজন করে আসামি আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। প্রতি দুজনের সঙ্গে ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল।
আসামির পালিয়ে যাওয়ার হট্টগোলের মধ্যে জঙ্গিদের দলটির পেছনে এক পুলিশ সদস্যকেও দৌড়ে সেই লেইনে ঢুকতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গলিতে এগিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মারধরের শিকার হয়ে রক্তাক্ত সেই পুলিশ সদস্যকে ফিরে আসতে দেখার কথাও জানান প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানি।
উচ্চ আদালতে নির্দেশনা থাকায় আদালতে আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়নি বলে জানিয়েছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল। তবে ঘটনার দিন যথাযথ পাহারারও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে দাবি করেছে দীপন স্মৃতি সংসদ।
দেশে আইনের শাসন বহাল রাখতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আরও বেশি সতর্ক ও আন্তরিক হওয়া ‘জরুরি’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শহরের সকল সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সিসিটিভি সার্ভাইলেন্সের আওতায় থাকার পরও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও আসামিদের উদ্ধার করতে না পারা দুঃখজনক।”
বাংলাদেশে লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে খুন হন দীপন।
আনসার আল ইসলাম জঙ্গিরা সেই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে। ২০২১ সালে আদালতের দেওয়া রায়ে আনসার আল ইসলাম নেতা সৈয়দ জিয়াউল হক, ছিনতাই হওয়া জঙ্গি শামীম, সিদ্দিকসহ আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
সেই দণ্ড এখনও কার্যকর না হওয়ায় দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও দীপন স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।