"আজ উবার, পাঠাও সবাই বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আর রিকশাওয়ালাদের আচরণ দেখলে মনে হচ্ছে তারা খুবই ‘ভাবে’ আছে”, বলেন এক যাত্রী।
Published : 27 May 2024, 08:00 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঢাকায় দিনভর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়েছে অনেক জায়গায়।
ঝড়ো বাতাসের মধ্যে গাছ উপড়ে পড়েও যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে বিভিন্ন সড়কে; গাছ পড়েও কয়েকটি গাড়ির ক্ষতিও হয়েছে।
তীব্র বাতাস ও বৃষ্টির কারণে সারা দিনেই সড়কে গাড়ি ও মানুষের চলাচল ছিল কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়েছে কমই।
সড়কে বাসের সংখ্যাও ছিল কম। তাই গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে।
কোথাও রিকশা চালকদেরও যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। আবার অতিরিক্ত ভাড়াও হেঁকেছেন তারা।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামাল আহমেদ বলেন, "আজ উবার, পাঠাও সবাই বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আর রিকশাওয়ালাদের আচরণ দেখলে মনে হচ্ছে তারা খুবই ‘ভাবে’ আছে। ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না, আবার গেলেও ভাড়া চায় অনেক বেশি।"
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মেট্রোরেল চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটেছে। সারা দিনে বেশ কয়েকবার এই ঘটনা ঘটেছে। কখনো উত্তরা থেকে মতিঝিল, কখনো একাংশে চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগ উঠে চরমে।
সোমবার সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমতে শুরু করে দুপুরের পর থেকে।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, মিরপুর ১০ নম্বর, বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, নিউ মার্কেট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, বেইলি রোড, শান্তিনগর, জুরাইন, উত্তরখান, দক্ষিণখানের বিভিন্ন সড়কে পানি জমার খবর মিলেছে।
বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মিরপুরের সেনপাড়ার থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত সড়কের দুইপাশেই হাঁটু সমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও পানি এর চেয়ে বেশি।
ইঞ্জিনে পানি গিয়ে কয়েকটি গাড়ি এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে যায়। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।
শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্য আবদুল আহাদ নামে বলেন, “দুপুরে পর পানি বাড়তে থাকে সড়কে। আরও বেশি পানি ছিল, বিকাল কিছুটা কমে। পানির কারণেই গাড়ি নষ্ট হয়েছে। অন্য গাড়ি চলতে সমস্যা হয়েছে।”
বেলা একটার দিকে উত্তরার জসিম উদ্দিন এলাকায় আরএকে ভবনের সামনে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে যাওয়া একটি সেডান গাড়ির ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে।
সোয়া চারটার দিকে গুলশান-১ নম্বরে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের উদয় টাওয়ারের সামনের ফুটপাতের একটি গাছ উপড়ে সড়কে পড়ে যায়। ডালের নিচে আটকা পড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
বিকেলে মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের সামনের সড়কে একটি গাছ পড়ে যায় রাস্তায়। জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী সড়কে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে।
বেলা চারটার দিকে গ্রিনরোডের পানি ভবনের সামনের সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে। এর আগে ওই সড়কের আইবিএ হোস্টেলের সামনেও আরেকটি গাছ পড়ে। ফলে ওই সড়কে কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিন্টো রোড, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক, মিরপুর ১৩ নম্বরের স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে, ভাসানটেক সড়কেও ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এলাকার ধানমন্ডি হকার্স নিউমার্কেট, রবীন্দ্র সরোবরের কাছে, গ্যাস্ট্রোলিভার গলি, নায়েম রোড, তল্লাবাগ, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, কমলাপুর, বেইলি রোডসহ কয়েকটি এলাকায় পানি জমেছে বলে খবর পেয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, “পানি নিষ্কাশনে আমাদের ৯১টি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। আমাদের পাম্পগুলোও সচল আছে। জলাবদ্ধতা ও গাছ পড়ে গেলে তা জানাতে আমাদের হটলাইনও চালু আছে।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পড়ে যাওয়া গাছ ঠেকাতে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৫ হাজার ৩০০ কর্মী কাজ করেছেন। ১০টি ‘কুইক রেসপন্স’ টিমও কাজ করেছে।
“আমাদের হটলাইনে সকাল থেকে এ সংক্রান্ত ৯৪টি কল এসেছে। এদের বেশিরভাগই গাছ পড়ে যাওয়ার তথ্য জানাতে। সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কর্মীরা ওই এলাকায় চলে গেছেন।
“শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১ নম্বর, টেকনিক্যাল মোড়ের এশিয়া সিনেমা হলের সামনে, কালসী, উত্তরখান ও দক্ষিণখানসহ ডিএনসিসির ১৩টি এলাকাকে আমরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছি। আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেখানে দিনভর কাজ করেছেন।”
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক জায়গায় পানি জমেছে, তবে কোথাও রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ নেই। অন্তত ৩০টি জায়গায় রাস্তার ওপর গাছ পড়েছিল বলে আমরা লিখে রেখেছি। এর বাইরেও আরও থাকতে পারে। সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো গাছ সরিয়েছে।”