কর্মবিরতিতে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ না হলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
Published : 17 Mar 2025, 08:53 AM
এমআরটি পুলিশের সদস্যদের মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।
এতে সোমবার সকাল থেকে একক যাত্রার টিকেট দেওয়া বন্ধ আছে, কেবল এমআরটি বা র্যাপিড পাস আছে- এমন যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারছেন। ফলে মেট্রোরেল চলাচল করলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্য যাত্রীরা।
মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেট রয়েছে। একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস বা র্যাপিড পাস, অপরটি একক যাত্রার টিকেট।
এমআরটি পাস কিনে শুধু রিচার্জ করে যাত্রীরা ট্রেনে চড়তে পারেন। যতক্ষণ কার্ডে টাকা থাকে ততক্ষণ ট্রেনে চড়া যায়। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা রিচার্জের সুযোগ আছে।
এভাবে কার্ড করে চলাচলে ১০ শতাংশ ছাড়ও মেলে। এই কার্ড পাঞ্চ করে স্টেশন থেকে বের হতে হয়। পাঞ্চ মেশিনেই ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়।
আর একক যাত্রার টিকেট কেটে গন্তব্যে যাওয়া যায়। এই টিকেট মেশিনে ঢুকিয়ে বের হতে হয়। টিকেট মেশিনে দিলেই শুধু স্টেশন থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকে।
রোববার বিকালে সচিবালয় স্টেশনে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা মেট্রোরেল কর্মকর্তাদের মারধর করেছে অভিযোগ তুলে গভীররাতে এ কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
সোমবার সকাল ৭টায় ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি এবং চলন্ত সিঁড়ির কলাপসিবল গেইট বন্ধ।
এতে একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত।”
এমনিতে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ওই গেইট খোলা হয়। বেলা ৭টা ২০ মিনিটে একজন নিরাপত্তাকর্মী এসে কলাপসিবল গেইট খুলে দেন। এ সময় বাইরে কয়েকজন যাত্রী অপেক্ষমান ছিলেন।
গেইট খুলে দিয়ে সজীব নামের ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “যাদের র্যাপিড পাস আছে, তারা যেতে পারবেন। সিঙ্গেল টিকেট দেওয়া বন্ধ আছে।"
ওই স্টেশনের কনকোর্স হলে গিয়ে দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টার বন্ধ। সেখানে কোনো কর্মী নেই।
সেখানে থাকা ডিএমটিসিএলের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের স্টাফরা সবাই এসেছেন, আশপাশেই আছেন; কিন্তু কাজ করবেন না।"
শাহবাগে স্টেশনে যাওয়ার জন্য আসা ফারুক হোসেন নামে একজন যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের সমস্যা তারা নিজেরা মিটমাট করুক। এগুলো করে আমাদের হয়রানি করা মানে নাই। টিকেট বন্ধ করে রাখছে।"
মেট্রোরেল কর্মীরা অভিযোগ করছেন, রোববার সোয়া ৫ টার দিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে রোববার মধ্যরাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ'র ব্যানারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, রোববার সোয়া ৫টার দিকে দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সাদা পোশাকে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। ওই সময় তারা ইএফও (অ্যাকসেস ফেয়ার কালেকশন) অফিসের পাশে অবস্থিত সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরা ছিলেন না, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সেখানে দায়িত্বরত সিআরএ (কাস্টমার রিলেশন অ্যাসিস্টেন্ট) সুইং গেইট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান।
এতে পুলিশের কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেইট ব্যবহার করে সুইং গেইট না লাগিয়ে চলে যান৷ এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও আগের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ পর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত এক টিএমও’র (টিকেট মেশিন অপারেটর) শার্টের কলার ধরে এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।
এসময় গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। তখন স্টেশনের স্টাফ ও যাত্রীরা এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আহত সিআরএকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি মেট্রোরেলের কর্মপরিবেশের জন্য হুমকি।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি দাবি তুলে ধরেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা, যার মধ্যে রয়েছে-
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে মিনিস্ট্রি একটি কমিটি করেছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এরইমধ্যে এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা কর্মবিরতি যারা করছে তাদের সঙ্গে আমার একটু আগেই কথা হয়েছে। তারা কাজে ফিরবেন।"
এমআরটি পুলিশের ডিআইজি সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এমআরটি পুলিশের একজন ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে।
“একজন এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা যেহেতু অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব।"