“আমরা যদি অমানবিক হতাম, তাহলে অনেক আগেই সেটা হতে পারতাম- বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে,” বলেন তিনি।
Published : 23 Aug 2024, 11:47 AM
আগাম সতর্কতা ছাড়াই ভারত ড্যাম খুলে দেওয়াই বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা নাকচ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “তারা যেটা বলছেন যে আমরা ডাম্বুরের গেট খুলে দিয়েছি, সেটা যে সঠিক তথ্য নয়, তা দেখার জন্য তারা যদি নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় আসেন, আমি নিজে গাড়ি করে তাদের নিয়ে যাব ডাম্বুর দেখাতে।
“তারা নিজেরা দেখতে পারেন যে আমরা নিজের থেকে গেট খুলে দিতে পারি কি না! সেটা সম্ভব কি না!”
উজানে ভারতের ড্যাম খুলে দেওয়ার কারণে বর্ষা শেষে ভাদ্র মাসে দেশে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক নেতা ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর ড্যাম খুলে দেওয়াকে বন্যার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে।
বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে এলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বাংলাদেশে বন্যার কারণ বলা হলেও বিষয়টি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।”
ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বরাতে বিবিসি বাংলা লিখেছে, তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে ত্রিপুরায়। এই বন্যায় সেখানকার গোমতী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওই জেলার গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডাম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেছেন, “যে প্রচারটা করা হচ্ছে ডাম্বুর গেট খুলে দেওয়া নিয়ে, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না। গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনও গেট খুলে দেওয়া হয়নি।
“এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। জলস্তর এর বেশি উঠলেই নিজের থেকেই জল গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। জলস্তর আবার নিচে নেমে গেলে নিজের থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই জলাধারের দুটি গেট দিয়ে জল বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০% হারে জল বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আগে থেকেই মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছিল।”
ভারতের ড্যাম খুলে দেওয়া কিংবা ড্যাম ভেঙে যাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে বন্যা কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “সঠিকভাবে এ বিষয়ে এখন বলতে পারছি না এবং এটা শুনেছি উপরে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিস্তারিত জানি না।
“বাধ খোলা হয়েছে এটা পত্র-পত্রিকায় লিখেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। সরকারিভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবারই তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি-উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে এ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এ যে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে; এটির মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে অসহযোগিতা করছে।”
তার প্রতিক্রিয়ায় ত্রিপুরার মন্ত্রী রতন লাল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা যদি অমানবিক হতাম, তাহলে অনেক আগেই সেটা হতে পারতাম- বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ বাবদ প্রায় ১৮০ কোটি ভারতীয় টাকা তাদের কাছে আমাদের বকেয়া আছে।
“তাও নিয়মিত ৫০-৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা সরবরাহ করে যাচ্ছি। অথচ আমাদের নিজেদের রাজ্যের বহু জায়গায় বিদ্যুৎ নেই এখন।”
রতন লাল দাবি করেছেন, গত তিন দশকে এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি ত্রিপুরায়। অগাস্ট মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি।
তার কথায়, “১৯৯৩ সালের ২১শে অগাস্ট ত্রিপুরার সাব্রুমে একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। আর এ বছর ২০শে অগাস্ট একদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার। ঠিক ৩১ বছর পরে একদিনে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
“পুরো মাসের হিসাব যদি দেখি, অগাস্ট মাসের ২১ দিনে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২১৪ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮.৭ মিলিমিটার, অর্থাৎ ১৫১% বেশি।”
এত বেশি বৃষ্টি ঝরায় স্বভাবতই এত বড় বন্যা দেখা গেছে বলে ভাষ্য রতন লালের।