কেউ নাম শোনেনি– এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেটা চালায় মাত্র দুজন, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পেয়ে ‘ধনী বনে গেছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আর তারপর শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে।
Published : 26 Feb 2025, 01:43 AM
মার্কিন তহবিলে বাংলাদেশের রাজনীতির জমিন শক্তিশালী করার যে প্রকল্প নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিতর্ক উসকে দিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করেছে তার দেশেরই একটি এনজিও- ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ (এসপিএল) শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ২৯ মিলিয়ন (২ কোটি ৯০ লাখ) ডলারের এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
কেউ নাম শোনেনি– এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেটা চালায় মাত্র দুজন, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পেয়ে ‘ধনী বনে গেছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আর তারপর শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে।
এ নিয়ে নানা আলোচনা, জল্পনা-কল্পনার মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলামের একটি এনজিওকে জড়িয়েও নানা কথাবার্তা শুরু হয় সোশাল মিডিয়ায়।
বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা খরচের দায়িত্ব আসলে কারা পেয়েছে; ওই প্রকল্পে আসলে কী কাজ হয়েছে, তার ফলাফলই বা কী- সেসব আলোচনাও শুরু হয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। বড় অংকের এ অর্থের আসল সুবিধাভোগী কারা, দেশের গণতন্ত্র বা রাজনীতি সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী হয়েছে কি না তাও স্থান পায় আলোচনায়।
এসপিএল প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। মাত্র ‘দুইজনের’ এনজিওর যে কথা ট্রাম্প গত শুক্রবার তার বক্তব্যে বলেছেন, তার বাস্তবতা পাওয়া যায়নি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ওই অনুদানের বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।
এনজিও ব্যুরোর বরাতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের এমন অর্থ পাওয়ার ‘এন্ট্রি’ নেই সরকারি সংস্থাটির কাছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউএসএআইডির অর্থায়নের ২৯ মিলিয়ন ডলারের এসপিএল প্রকল্প ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ মার্চ; মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
প্রকল্পের মোট প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৮৫৫ ডলার। তার মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ ১৭ ডলার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাড় হয়।
আট বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে ২০২৪ সালে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ১২৭ ডলার। এর আগে ২০২৩ সালে ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ ডলার; ২০২২ সালে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার ২২ ডলার; ২০২১ সালে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৪ ডলার; ২০২০ সালে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮১ ডলার; ২০১৯ সালে ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০ ডলার; ২০১৮ সালে ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৭ ডলার এবং ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ ডলার ছাড় হয়।
ট্রাম্পের বক্তব্য এবং এসপিএল প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে ইমেইল করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে তাদের একটি প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সেসিল বলেন, তার কোনো ‘মন্তব্য নেই’।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিরোধ মেটানো এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যৌক্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিকদের দক্ষতা ও শিক্ষা দেওয়া এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।
“ভবিষ্যতের জন্য পুরুষ ও নারী নেতাদের শক্তিশালী দল গঠন করা হবে। নীতিগত বিতর্ক ও সংস্কারে কার্যকর অবদান রাখা; রাজনৈতিক ভিন্নতার মধ্যেও সহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক আলোচনায় সম্পৃক্ততা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলায় তাদের দক্ষতা বাড়ানো হবে।”
এসেই ইউএআইডির সহায়তায় কোপ ট্রাম্পের
চার বছর বিরতির পর দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই ইউএসএআইডির ওপর খড়্গহস্ত হন ডনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন এই সংস্থা গত শতকের ষাটের দশক থেকে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহযোগিতা কার্যক্রম দেখভাল করে আসছে।
শুরুতেই এক নির্বাহী আদেশে এ সংস্থাসহ বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের উন্নয়ন অর্থায়নে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ দেশ তিনি।
ইউএসএআইডির দিকে তোপ দাগার এই সময়ে তিনি সঙ্গী করেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ককে; যাকে নতুন গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান করেছেন তিনি।
ট্রাম্প ও মাস্কের দাবি, সংস্থাটি অহেতুক নানা প্রকল্পে মার্কিন করদাতাদের অর্থ খরচ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কাজে তো আসেইনি, উল্টো জালিয়াতির মাধ্যমে অনেককে পকেট ভরার সুযোগ করে দিয়েছে।
ইউএসএআইডি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক প্রচার নিয়ন্ত্রণেও অর্থ ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ তাদের।
পুরনো খবর
বাংলাদেশে ২ জনের এক প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার অনুদান: ট্রাম্প
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার বরাদ্দ বাতিল করলেন
এমন প্রচারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন ট্রাম্প ও মাস্ক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ২৯ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পের উদাহরণ টানছেন তারা।
ট্রাম্প গত শুক্রবার এসপিএল প্রকল্পের নাম ধরে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হয়। এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি।
“কল্পনা করতে পারেন! আপনার ছোট একটি প্রতিষ্ঠান আছে; আপনি এখান থেকে ১০ হাজার ডলার, সেখান থেকে ১০ হাজার ডলার পান। এর মধ্যে আপনি মার্কিন সরকারের কাছ থেকেই পেয়ে গেলেন দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার।”
তার ভাষ্য, “ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করেন, দুজন। আমার মনে হয়, তারা এখন খুবই খুশি; খুবই ধনী। কোনো ব্যবাসায়িক সাময়িকীর প্রচ্ছদে শিগগিরই তাদের ছবি ছাপা হবে প্রতারণায় সেরা হওয়ার জন্য।”
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান ২৯ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ওয়াশিংটনে শনিবার আরেক অনুষ্ঠানে এসপিএল প্রকল্প নিয়ে আরেকটি বোমা ফাটান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
মেরিল্যান্ডের একটি মিলনায়তনে কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) তিনি বলেন, “২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে রাজনৈতিক পরিসর শক্তিশালী করার জন্য এবং বাংলাদেশে, যাতে একজন উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা যায়।”
প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিগত প্রশাসনকে সমালোচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় ‘উগ্র বাম কমিউনিস্ট’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
এসপিএল প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে, জড়িত কারা
এসপিএল প্রকল্প বাস্তবায়নে শুধু ইউএসএআইডির ২৯ মিলিয়ন ডলার নয়, এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ডিএফআইডির থেকেও ফান্ড নেওয়ার কথা লেখা হয়েছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে।
প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ফেলোশিপসহ মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এ কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর সেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংলাপের আয়োজন করা হত। তৃণমূলের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ নেতাদের জন্যও ফেলোশিপের ব্যবস্থা ছিল।
এমন একটি প্রশিক্ষণের তথ্য দিয়ে ২০২৩ সালের মার্চে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডেমেক্রোসি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, ওই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ১৬১ জন মাস্টার ট্রেইনার, ২০৬ জন তরুণ ফেলো এবং ৮০ জন সিনিয়র ফেলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
“পরে ওই প্রশিক্ষকরা ৫৭২টি প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে দলের ১০ হাজার ৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষিত করেন। এছাড়া প্রকল্পটি উল্লেখযোগ্যভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রসার ঘটিয়েছে, যা আওয়ামী লীগের ৭ হাজার নারী নেতার রাজনৈতিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।”
এপিএলের আওতায় ইয়াং লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (ওয়াইএলএফপি) নামে একটি কর্মসূচি চালায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এর মাধ্যমে প্রধানত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হত।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশাল বলছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ ব্যাচে ৫৬১ জন তরুণ রাজনৈতিক নেতা এ কর্মসূচি থেকে ’গ্র্যাজুয়েশন’ করেছেন।
কোর্সগুলোর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে সনদ হস্তান্তর করা হত।
এসপিএল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোটের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম চালিয়েছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এক্ষেত্রে মতবিনিময়ের বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি ভিডিও প্রচার ছিল তাদের।
এ প্রকল্পের অধীনে ‘কারণ বাংলাদেশ আমার’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে ভোট দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রচার চালানো হয়। এরপর ওই পেইজের নাম বদলে রাখা হয় ‘আমিও জিততে চাই’।
ওই দুই নামে ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে। ‘আমিও জিততে চাই’ ওয়েবসাইটে ছিল নাগরিকদের নানান দাবি এবং প্রত্যাশার কথা তুলে ধরা, পোস্টার তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা।
‘আমিও জিততে চাই’ ফেইসবুক পেইজে বলা হয়েছে, এপিএল প্রকল্পের আওতায় এ পেইজ তৈরি করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করা যায়’।
এ দুই ওয়েবসাইটের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তৈরিতে অর্থায়ন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
এসপিএলের আওতায় ‘পলিটিক্স ম্যাটার্স’ নামে অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়, যেটির উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ১০ অগাস্ট। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের পাশাপাশি ওই আয়োজনে ছিলেন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
অনুদান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে কর্মকর্তাদের পরিচিতির ‘টিম’ অপশন আর দেখা যাচ্ছে না।
তবে গত ৩০ জানুয়ারির ওয়েব আর্কাইভে ওই তালিকায় বাংলাদেশে সংস্থার ‘চিফ অব পার্টি’ হিসেবে দুজন এবং ‘ডেপুটি চিফ অব পার্টি’ হিসেবে একজন কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মোট কতজন কর্মী কাজ করে সে বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে জবাব দেননি চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সেসিল।
তবে সাবেক-বর্তমান দুই কর্মীর সঙ্গে কথা বলে লোকবলের বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে চারটি প্রকল্প রয়েছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের। এর মধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা তিন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ঢাকা অফিস এবং আঞ্চলিক মিলিয়ে শতাধিক কর্মী রয়েছে তাদের। প্রতিটি প্রকল্পের একজন চিফ অব পার্টি এবং আরেকজন ডেপুটি চিফ অব পার্টি থাকেন। ওপেন সার্কুলারের মাধ্যমে নিয়োগ হলেও চিফ অব পার্টিরা বিদেশিই ছিলেন।
এ প্রকল্পের অর্থ নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্নধর্মী বক্তব্যের পর বাংলাদেশে জুলাই-অগাস্টের গণ অভুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে এর ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে ইউএসএআইডির এই ২৯ মিলিয়ন ডলারের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “এসপিএলের অধীনে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম দেখলে বুঝবেন, সেখানে কারা সম্পৃক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের তৃণমূলের কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি।
“এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের আয়োজনে নিয়মিত থাকতেন। পুরো কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে যারা খাটো করতে চায়, তারা এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে।”
আইনুলদের অনুদান ‘নাগরিক’ প্রকল্পের
ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যে ফেইসবুকে এক পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আইনুল ইসলাম লেখেন, “স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) কর্মসূচির সাথে এমজিআর, কিংবা ডিএফটিপি কিংবা ’সেইভ' এর কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা একদিনের জন্যও এই প্রোগ্রামে কাজ করিনি।
“ডিএফটিপি কিংবা ‘সেইভ’ প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ অ্যাকাডেমিক, শিক্ষামূলক এবং তরুণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সক্ষমতাবৃদ্ধি, গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ইত্যাদির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভুল, ভিত্তিহীন বা অপতথ্য না ছড়ানো কিংবা বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ থাকল।”
গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ এবং এর সঙ্গে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আইনুল ইসলামের ‘মাইক্রোগভর্নেন্স রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (এমজিআর)’ যে কার্যক্রম চালায়, তার অনুদানের একটি অংশ আসে ইউএসএআইডির নাগরিক প্রকল্প থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিতে ‘আমার ভোট আমার’ নামে এই প্রকল্পের সূচনা হলেও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে এটা ‘নাগরিক প্রকল্প’ নামে চলার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন অ্যাসিট্যান্স’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউএসএআইডির অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ প্রকল্প পেয়েছে কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেংদেনিং (সিইপিপিএস)।
ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটরাল সিস্টেমসের (আইএফইএস) সঙ্গে সিইপিপিএস মোর্চায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)।
নাগরিক প্রকল্পে মোট অনুদানের পরিমাণ দুই কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার বলে লিংকডইনে এক পোস্টে বলেছেন ইউএসএআইডির পলিটিক্যাল প্রসেস উপদেষ্টা লুবাইন মাসুম।
‘ফরেন অ্যাসিট্যান্স’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ‘আমার ভোট আমার প্রকল্পের’ মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। প্রকল্পটি কবে শুরু হয়েছে, তা ওয়েবসাইটে না থাকলেও এই প্রকল্পের প্রথম অর্থ ছাড় হয়েছে ২০২২ সালে।
ওই ওয়েবসাইটে পাওয়া অঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে এ প্রকল্পে মোট অর্থ ছাড় হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৭ ডলার। এই সময়ে প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ছিল এই অঙ্ক থেকে ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩ ডলার বেশি।
আইনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইইএফএসের সঙ্গে তারা ২০১৩ থেকে কাজ করছেন। তবে নাগরিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ২০২২ সালে।
“যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফান্ড সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানে আসে না। দেশটিতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা পায়। এরপর স্থানীয় কনসালটেন্ট বা ছোট ছোট সংস্থার কাছে ফান্ড আসে। আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি, আমি কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করি।”
তার ভাষায়, “আমাদের মত প্রতিষ্ঠানগুলো মূল যে প্রতিষ্ঠান ফান্ড এনেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকি। এরপর বিল-ভাউচার জমা দেওয়ার পর সে অনুযায়ী খরচটা পাই।”
নিজের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোগভর্নেন্স রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বা এমজিআরের অধীনে কাজের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সাল থেকে আইএফইসের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেন আইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ইউএসএআইডির সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো পার্টনারশিপ নাই। আমি কাজ করি, ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটরাল সিস্টেমসের সঙ্গে। ওটা আমেরিকান একটা সংস্থা। আমি প্রায় ২০১৩ সাল থেকে ওদের সাথে, পাশাপাশি আরও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ছোট ছোট কাজ করে থাকি।
“আইফিইএসের বিভিন্ন ধরনের ফান্ডিং আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেমন পায়, কানাডা, যুক্তরাজ্য বিভিন্ন দেশ থেকেও পায়। সেখান থেকে আমাদেরকে ছোটখাটো প্রোগ্রাম দেয়। যখন আমাদেরকে ফান্ড দেয়, তখন বলে এই লোগোটা ব্যবহার করতে হবে, কারণ এটা ইউএসএআইডির ফান্ড। মাঝে মাঝে বলে এফসিডিওর ফান্ড, সুতরাং এফসিডিওর লোগো ব্যবহার করতে হবে।”
ট্রাম্পের বক্তব্যে আসা ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) কর্মসূচির’ সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার কথা তুলে ধরে আইনুল বলেন, “প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘আমার ভোট আমার’। পরে এটা নাম দিয়েছে ’নাগরিক’। আমাদেরকে ফান্ডিং করত, সম্ভবত ওখান থেকেই আসত। কারণ যখন যে ফান্ড থেকে অর্থায়ন করত, সেটা তারা আমাদেরকে বলত।”
তিনি বলেন, ২০২২ সাল থেকে ‘সেইভ’ এর কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক প্রকল্পের অধীনে অনুদান দিচ্ছে। এর আগে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।
এমজিআরের অধীনে ২০১৮ সালে স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ভায়োলেন্স এভরিহোয়্যার (সেইভ) নামে একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন আইনুল ইসলাম; এর অধীনে এ পর্যন্ত তিন হাজার দুইশর বেশি শিক্ষার্থীকে নানা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার কথা তিনি বলছেন।
এর সঙ্গে অ্যাকাডেমিক ও প্র্যাকটিক্যাল কার্যক্রমের মিশেলে ‘ডেমোক্রেসি: ফ্রম থিওরি টু প্র্যাকটিস (ডিএফটিপি)’ নামে একটি কার্যক্রম চালাচ্ছেন আইনুল ইসলাম। সবশেষ ডিএফটিপির অর্থায়নও ইউএসএআইডি করেছে।
ভোটার বাড়ানোর ২১ মিলিয়ন ডলার কি ভারতের?
ডনাল্ড ট্রাম্প ইউএসএআইডির তহবিল ‘ঠিকমত ব্যবহার না হওয়ার’ যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ডলার খরচের কথা বলেন।
ভারতে ভোটারদের নিয়ে কাজ করা ‘ইলেকশন্স অ্যান্ড ইলেকটোরাল প্রসেস’ নামে সিইপিপিএস এর একটি প্রকল্প থাকলেও সেটি ওতটা সক্রিয় নয়। এ প্রকল্পে ২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত ইউএসএআইডি থেকে ছাড় হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৯ ডলার। এরপর আর কোনো লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘ইলেকশন্স অ্যান্ড ইলেকটোরাল প্রসেস’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মতামত ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিযোগিতার প্রতি সমর্থন নেওয়া, যাতে জনগণের মত প্রতিফলিত হয়। রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক শক্তির অধীনে বহুদলীয় প্রতিযোগিতার উপায় বের করার কথাও বলা হয় উদ্দেশ্য হিসেবে।
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ভারত নয়, বরং বাংলাদেশে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ছিল ইউএসএআইডির এ অনুদান। ‘আমার ভোট আমার’ বা নাগরিক প্রকল্পের আওতায় ওই কার্যক্রম চলার কথা লেখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনগুলোতে।
‘বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচারের’ জন্য ইউএসএআইডির তরফে ‘নাগরিক’ প্রকল্পে ২১ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র বেসরকারি সংস্থা ‘হায়ারগভ’, যারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের ক্ষেত্রে পরামর্শ-সেবা দিয়ে থাকে।
নাগরিক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশে প্রতিবন্ধীদের কাজ করা ‘পাওয়ার টু পারসুয়েড’ কর্মসূচিতে অর্থায়নের কথাও বলা হয়েছে আইএফইসের এক প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে আইনুল ইসলামের দাবি, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে হবে, এমন কোনো কার্যক্রম তারা করেননি। তরুণদের দক্ষতা বাড়ানো ছিল তাদের কাজের অংশ।
নাগরিক প্রকল্পে আরও যাদের কার্যক্রম
শুধু আইনুল ইসলামের উদ্যোগগুলো নয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে নাগরিক প্রকল্পের নানা কাজে হাঙ্গার প্রজেক্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস), জাগো ফাউন্ডেশন, ইন্টারনিউজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত ছিল।
বদিউল আলম মজুমদার পরিচালিত সংস্থা হাঙ্গার প্রজেক্টের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আইএফইএস এর সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের ১২ জেলার ২২ উপজেলায় নাগরিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের মেয়াদ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে হাঙ্গার প্রজেক্ট বলছে, এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও উপায়-উপকরণের মাধ্যমে নাগরিকদের কাজে সমাজ, রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে। যাতে তারা সহিংসতা মোকাবেলার পাশাপাশি শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
হাঙ্গার প্রজেক্টের সাবেক প্রধান বদিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো বড় প্রতিষ্ঠান যখন ইউএসএআইডি বা অন্যদের প্রজেক্ট পায়, তখন তারা সেটা বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে অন্যান্য সংস্থার সহায়তা নেয়।
“আমরাও নাগরিক প্রকল্পের কিছু কাজ করেছি। এর মধ্যে ছিল শান্তিরক্ষা এবং তরুণদের নানা ধরনের কার্যক্রমের সম্পৃক্ততা ছিল। নাগরিক প্রকল্পের মেয়াদও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।”
আইএফইএসের মাধ্যমে আসা ইউএসএআইডির অর্থায়নে পলিসি ক্যাফেসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনিরুজ্জামানের প্রতিষ্ঠান বিআইপিএসএস।
ট্রাম্পের বক্তব্য দুদেশের সার্বিক সম্পর্কে ‘ঝুঁকি’
বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে একাধিকবার টেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একই বক্তব্যে দুদেশের সার্বিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধ হলে আপাতদৃষ্টিতে বেসরকারি খাতে যারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করে, এই সংস্থাগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সার্বিকভাবে বেসরকারি খাতের উপর পড়বে এটা স্বাভাবিক।
“কিন্তু অধিকতর বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, ডনাল্ড ট্রাম্প যেটা করছেন, সেটা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পুরো সম্পর্কের উপর পড়তে বাধ্য। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেবল উন্নয়ন সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে না। এর সাথে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৌশলগত এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এটা বাংলাদেশ অবহেলা করতে পারে না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও অস্বীকার করতে পারে না।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সার্বিকভাবে নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচিকে ডনাল্ড ট্রাম্প পরিবর্তন করতেই পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশকে যেহেতু তিনি একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করছেন, একাধিকবার বলে ফেলেছেন। একই কথা তোতাপাখির মত বলতেছে, তার মানে হচ্ছে, এটা কেবল উন্নয়ন সহায়তা না, সার্বিকভাবে পুরো সম্পর্কের উপর পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়ে গেছে।
“এটা বাংলাদেশ যেমন ইগনোর করতে পারে না, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যদি সংবেদনশীল মানুষ থাকে, তাদেরও ইগনোর করা উচিত না এবং সম্ভবও না। কাজেই আমি মনে করি, উভয়পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।”
এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমার কাছে স্পষ্ট তথ্য নাই, কাকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে, কোথায় খরচ হয়েছে। এমনও ইঙ্গিত আমি পত্রিকাতে কোনো একটি প্রতিবেদনে দেখেছি, এটা হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই কোনো একটা প্রতিষ্ঠানকে হয়ত দেওয়া হয়েছে টাকাটা, খরচ করার জন্য এখানে।
“আমরা এখনও জানি না। বিষয়টা হচ্ছে, আমরা তো জানি না, কে করেছে। আমাদের যে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, তারা কিন্তু বলেছে, এই রকম কোনো এন্ট্রি তাদের নাই।”
একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ”সানফ্রান্সিকো থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকাপয়সা পাঠাত, ডায়ালাইসিস সেন্টার চালানোর জন্য। সেটার টাকাপয়সা আনতে গিয়ে আমি দেখেছি, কোনো টাকা বাস্তবিক অর্থে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া হাতে পাওয়াই সম্ভব না। “কাজেই এই ২৯ মিলিয়নের ব্যাপারে এনজিও ব্যুরো বলছে যে, এমন কোনো এন্ট্রি তারা দেখতে পাচ্ছে না। তাহলে আমাদেরকে আপাতত তাদের কথাই মেনে নিতে হবে। তারপরে যদি কোনো তথ্য বের হয়, আমরা সেটা দেখব।”