ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়ে এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।
Published : 20 Apr 2024, 07:24 PM
বৈশাখের তপ্ত গরমে দেশজুড়ে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে দুই জেলায় চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ; সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়িয়েছে যশোর, পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আগে থেকেই তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছিল দেশ। এরমধ্যে শনিবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আর পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতেও পরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, সেখানে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪২ ডিগ্রিতে।
এদিন ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়ে এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে দুই ডিগ্রির মতো।
দেশজুড়ে এমন খরতাপ পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের ছুটি শেষে রোববার খোলার কথা থাকলেও তা এখন খুলবে ২৮ এপ্রিল।
তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, যা এ মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
শহরের বারান্দিপাড়া কদমতলার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “দুপুর থেকে যেন আগুনের হল্কা ছাড়ছে প্রকৃতি। কোনো কাজ করাই সম্ভব হচ্ছে না এই গরমে।”
এর আগে চার দিন ধরে টানা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়; তবে তা ৪২ ডিগ্রি হয়নি। এদিন চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মৌসুমে যা সর্বোচ্চ।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৪-২৫ তারিখের দিকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে আসলেও এ মাসজুড়েই বিরাজ করবে তাপপ্রবাহ।
“তখন অতিতীব্র থেকে তীব্র, তীব্র থেকে মাঝারি এমন থাকবে। তবে তাপপ্রবাহ যে চলে যাবে তা না। এ মাসে বড় পরিসরে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাও নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে-যেমন, সিলেটের দুয়েক জায়গায় সামান্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।”
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
এর আগে টানা চারদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। শুক্রবার সেখানে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ।
এদিন তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বাকি অংশ এবং বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে গরমের পাশাপাশি কালবৈশাখীরও দাপট থাকে বেশি।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে।
শুক্রবার আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক এক সতর্কবার্তায় বলেছিলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন থাকতে পারে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে বাড়তে পারে অস্বস্তি।
তীব্র গরমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও হিট স্ট্রোক এড়াতে চুয়াডাঙ্গায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতনও করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
গরমে রোগী বাড়ছে যশোরে
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্রা মল্লিক বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যাও।
গত ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি বিভাগে এসব কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে আসার পথে একজনের মৃত্যুর তথ্য দেন তিনি।
তীব্র গরম: সাত দিনের ছুটি স্কুল-কলেজে
মেডিসিন, সিসিইউসহ ও বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে বিছানার চেয়ে দুই তিনগুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। বেড না পেয়ে রোগীদের অনেকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
হাসপাতালের ২৮ শয্যা বিশিষ্ট করোনারি কেয়ার ইউনিটের তথ্য বলছে, গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৮১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন; যার মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন।
পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে তিন দিনে ৯১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে এ সময় ৩৮ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার সড়কগুলো জনশূন্য হয়ে পড়তে দেখা যায়। কেউ কেউ গরম থেকে বাঁচতে ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছিলেন।
শহরের বকচর এলাকার রিকশাচালক কাওছার আহমেদ বলেন, “রাস্তার তাপে চোখ-মুখ পুড়ে যাচ্ছে। রিকশা চালানো যাচ্ছে না, তাই ছায়ায় বসে আছি।”