তিন বছর পর বসল এই মিলনমেলা; তাতে যোগ দিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
Published : 13 May 2023, 10:38 PM
ঘরোয়া আড্ডা, গল্প আর ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক সব খাবারে রসনা তৃপ্তির মধ্য নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
শনিবার ঢাকার বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসে ঘরোয়া পরিবেশে ছিল এই আয়োজন। কোভিড মহামারীর কারণে তিন বছর পর আর চলতি বছর রোজার মধ্যে পহেলা বৈশাখ পড়ায় বাংলা প্রথম মাসের শেষ দিনে হল এবারের মিলনমেলা।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ রাজনীতিক, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, অভিনয়শিল্পীসহ নানা পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন এতে।
দুপুর ১টা থেকে ছিল এই আয়োজন, কিন্তু কয়েকজন উপস্থিত হয়ে যান নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। সময় গড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত চলতে থাকে আড্ডা-গল্প। রাজনীতিতে বিপরীতমুখী শিবিরের মানুষদের ঐকতান তৈরি হয় এই সময়ে।
অতিথিদের স্বাগত জানানো আর সহকর্মীদের নিয়ে অতিথিদের আপ্যায়নে ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
রাজনীতিকদের মধ্যে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
বৈশাখী শুভেচ্ছা নিয়ে ফুলের তোড়া হাতে উপস্থিত হন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামনিস্ট বিভূরঞ্জন সরকার, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননা পাওয়া জুলিয়ান ফ্রান্সিস, গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাশেদা কে চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল আজাদও যোগ দেন আয়োজনে।
হাবিব ব্যাংকের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম বরকত, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট পিএলসি’র চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের (এলআর গ্লোবাল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ ইসলাম বৈশাখের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) বিটপী দাশ চৌধুরী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্ত্রী জয়া কবীরকে সঙ্গে নিয়ে আসেন বেসিসের সাবেক সভাপতি, মেট্রোনেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির।
ইনডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট শোয়েব চৌধুরীও এসেছিলেন।
অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজনে যোগ দেন আইনজীবী তুরিন আফরোজ।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক, অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী জয়শ্রী কর জয়া এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবও ছিলেন বর্ষবরণের আয়োজনে।
স্ত্রী শিরিন সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নজিব আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা শাহেদ আক্তার আসেন ছিলেন এই আনন্দ আয়োজনে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া আয়োজনে যোগ দিতে না পারলেও এক কর্মীর মাধ্যমে ফুল পাঠিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আয়োজনে।
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের পক্ষ থেকে ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন্স মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সজলসহ কয়েকজন।
বাঙালিয়ানার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকায় বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন কূটনীতিকও।
মুখরোচক সব বাঙালি খাবারে আপ্যায়ন করা হয় অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের।
তাপদাহের এই সময়ে কাঁচা আম ও লেবুর শরবৎ, ডাবের পানি দিয়ে শুরু হয় অতিথিদের আপ্যায়ন পর্ব। খই, বাতাসা, নাড়ুর মতো বৈশাখী মেলার নানান অনুষঙ্গও স্থান পায় আপ্যায়নে। সিঙ্গারা, ডালপুরি আর চটপটির মতো মুখরোচক খাবারও জায়গা করে নিয়েছিল আয়োজনে।
মূল খাবারে আচারি গরু, খাসির রেজালা, মুরগি ভুনা, চিংড়ি করলা, লইট্যা শুঁটকি ভুনা, বেগুন দিয়ে রূপচাঁদা শুঁটকি ভুনা, ছুরি শুঁটকি, সালাদ, মাছের চচ্চড়ির সঙ্গে ছিল ইলিশের কয়েক পদ। সরষে ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশ ভাজা, ইলিশ মাছের মাথার সঙ্গে কচুর লতি আর ইলিশ মাছের ডিম ভুনা ছিল সেই তালিকায়।
খাবার তালিকায় জায়গা করে নেয় বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ডিম ভর্তা, ডাল ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, মিষ্টি কুমড়া ভর্তা আর চিংড়ি ভর্তা।
লাল চালের ভাত, সাদা চালের ভাত আর ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিল নগরে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে ওঠা পান্তা ভাতও।
সব শেষে ঘরে তৈরি পায়েসের সঙ্গে টক কিংবা মিষ্টি দই, বরিশালের রসগোল্লা, গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি, যশোরের ক্ষীর সন্দেশে মিষ্টিমুখ করা হয় সবাইকে।