ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি করতে বলেছেন।
Published : 01 Feb 2024, 07:28 PM
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনের’ স্বীকৃতি পাওয়ার আশা করছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
গাজার গণহত্যা ঠেকানোর বিষয়ে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজের আদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে একে স্বাধীন ফিলিস্তিনের ‘প্রথম ধাপ’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টকে’ তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যে কথা বলা হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটি আরো আগেই করা উচিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রও একই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলেও তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রামাদান।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময়কে এগিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য প্রস্তত বলে গত ৩১ জানুয়ারি জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
সেদিন তিনি বলেন, “আমাদের উচিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দেখতে কেমন হবে, কীভাবে গঠিত হবে, কীভাবে কাজ করবে তা নির্ধারণ করা। সেটি যদি হয়, তখন আমরা আমাদের মিত্রদেরকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এমনকি জাতিসংঘেও স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি দেখব।”
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য: ক্যামেরন
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাবনাকে ‘ভালো পদক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করে রামাদান বলেন, “যুক্তরাজ্যের যদি সত্যিকারের নৈতিকতা থাকত, তাহলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা হত প্রথম দেশ।
“কেননা, আমরা সবাই জানি, এখন যেসব সমস্যা, যেসব দুর্দশার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি- তার মূলে রয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি নীতি। কিন্তু নৈতিকতা সেখানে নেই। এটা খুব ভালো পদক্ষেপ।”
যুক্তরাষ্ট্রও একই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দাবি করে ফিলিস্তিনি দূত বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি করতে বলেছেন।”
তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই, আমাদেরকে মূল্য দিতে হয়, কোনো কিছু এমনিতে আসে না। এটার মূল্য আমরা পরিশোধ করে যাচ্ছি।”
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনি প্রচারের সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিন বছরে সেটার কিছুই করেননি বলেও অনুযোগ করেন রামাদান।
তিনি বলেন, “এখন তিনি যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, সেটা যদি আগে করতেন তাহলে ৭ অক্টোবরের ঘটনা ঘটত না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কাজ করত, তাহলে ৭ অক্টোবর ঘটত না। এ কারণে রক্তের দাগ পড়েছে তাদের সবার হাতেই।”
আইসিজের আদেশে সন্তোষ আবার আক্ষেপ
গাজায় গণহত্যার মত অপরাধ ঠেকানোর পাশাপাশি বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে গত ২৭ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছে আইসিজে।
তবে অক্টোবরের দ্বিতীয় চলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের আবেদন আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা জানালেও সে বিষয়ে আদেশ দেয়নি জাতিসংঘের শীর্ষ এই আদালত।
এই আদেশে সন্তোষ ও আক্ষেপ-দুটোই প্রকাশ পায় রামাদানের বক্তব্যে।
সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭৫ বছর ধরেই ‘গণহত্যা’ চলছে। আইসিজের আদেশ না হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েল দায়মুক্তি পেয়ে আসছিল। এই আদেশ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েলের দায়মুক্তি আর নয়- তুমি অপরাধ করেছে, অন্য সবার মতো তোমাকে মূল্য দিতে হবে।”
এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘের এই আদালতের ‘সুনাম হুমকির মুখে’ ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে ইসরায়েলকে সেই আদেশ মানতে বাধ্য করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে কেন আদেশ দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্নও তুলেছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূত।
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি হিসাবে আমরাই রক্ত দিচ্ছি; আমাদের সন্তান, মা, আমাদের আত্মীয়স্বজন রক্ত দিচ্ছে। সুতরাং আমরা সর্বনিম্ন যেটা আশা করতে পারি, তা হচ্ছে ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামাতে বলা। কিন্তু তারা তা করেনি।
“রাজনীতিক হিসাবে আমরা বুঝতে পারি, কেন তারা সেটা করেনি। তারা করেনি নয়, তারা করতে পারেনি। কেননা, ইসরায়েল ৭৫ বছর ধরে দায়মুক্তি পেয়ে আসছে। হুট করে আপনি কি আশা করতে পারেন, তারা আইসিজের আদেশ গ্রহণ করে নেবে?”
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দেন রাষ্ট্রদূত রামাদান- “কোনো পথ নেই, কোনো সুযোগ নাই।”
আদেশের চারটি পয়েন্টেই পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে অপরাধ ও গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে কারণে আদালতে ইসরায়েলের বিচারক ও তাদের সরকার ওই চার পয়েন্টের বিরোধিতা করেছে।”
ডিকাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ আইসিজের