ভোরের পাখির কলতান আর সঙ্গীতের সুর যেন মিলেছে একই প্রাণে।
Published : 14 Apr 2024, 08:14 AM
শান্ত স্নিগ্ধ রমনার সবুজ চত্বরে কেবল ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
নতুন প্রভাতের নতুন আলোয় নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠান সাজিয়েছে সংস্কৃতি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
বৈশাখের প্রথম দিন ভোরে আহীরভৈরব রাগে শিল্পী মর্তুজা কবির মুরাদের বাঁশির সুরে শুরু হয় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
পরে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে শোনান 'আঁধার রজনী পোহালো'।
একক কণ্ঠে 'বিমল আনন্দে জাগো রে' শোনান সত্যম্ কুমার দেবনাথ এবং তানিয়া মান্নান শোনান 'তোমার সুর শুনায়ে'।
ভোরের পাখির কলতান আর সঙ্গীতের সুর যেন মিলেছে একই প্রাণে। প্রকৃতিও যেন সুরের মায়াজালে আবাহন করছে বাংলা নববর্ষকে। রমনার সবুজ চত্বরে ভেসে আসছে সেই চিরচেনা গানের সুর, যা চলে দুই ঘণ্টা। শেষ হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
ষাটের দশকে পাকিস্তানীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রমনার বটমূলে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট, এখন তা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রতি বছরই এই আয়োজনটি করে আসছে ছায়ানট। কোভিডকালীন দুই বছর আয়োজনটি করা হয়েছিল ভার্চুয়ালি।
সেই ধারাবাহিকতার পথ ধরে এবারও গান, আবৃত্তি আর কথনে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ছায়ানট।
এবার অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। যোগ হয়েছে, জাতীয় কবির কালজয়ী সৃষ্টির বিজাতীয় অবমাননার প্রতিবাদ এবং লেখনীর দুর্দম শক্তিতে বাঙালির গণজাগরণে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে চলা আবু বকর সিদ্দিককে স্মরণ।
ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, এবার আয়োজনে সম্মেলক গান আছে ১১টি, একক গান ১৫টি এবং পাঠ ও আবৃত্তি রয়েছে।
ঢাকার রমনা উদ্যানে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও (www.chhayanaut.comdigitalplatformchhayanaut)।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, আমরা মানুষের জয়গান করছি। ভোগবাদ নয়, স্বার্থপরতা নয়। মনুষ্যত্বকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান- স্বাভাবিকতার সাধনা এবং সম্প্রীতির ধ্যান ‘দূর করো আত্মকেন্দ্রিকতা, আপনি জ্বালো এই তো আলো’।”
ছায়ানট এর আগে সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজন নিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলেছিল, “বিশ্বব্যাপী, বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কমেছে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, যার ফলে ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, ক্রমান্বয় অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্বের ক্রমবৃদ্ধিতে, অন্য মানুষের প্রতি আচরণের অস্বাভাবিকতায় আজ আমরা মুখোমুখি নতুন সংকটের।”
“তবে এই সংকটে আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, বিশ্বাস করি মানুষের কাছে গিয়ে, মানুষের হাতে হাত রেখে সকলের সাথে মিলবার, চলবার, গাইবার সাধনাই মানুষকে আবার ফিরিয়ে আনবে মানুষের কাছে। স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনায় আমাদের যুক্ত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, “মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে সার্থক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আঁধার রজনী শেষে নবীন আলোয় নবীন আশায় নবীন জীবন লাভ করে সুদিনের পথে চলব আমরা, বাঙালিকে বলব, নাই নাই ভয় হবে হবে জয়।”
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লিসা বলেন, সকলকে নিয়ে শুভ কর্মপথে চলবার, কণ্ঠে নির্ভয় গান তুলে নেবার ছায়ানটের এই আয়োজন সার্থক হবে সর্বজনের সমর্থন, অংশগ্রহণ এবং উপলব্ধিতে।