সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতা রুখে দেওয়ার আহ্বানে শাহবাগ থেকে মিছিল করেন শিক্ষকরা।
Published : 06 Aug 2024, 04:54 PM
গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর চলমান পরিস্থিতিতে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
এর আগে সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতা রুখে দেওয়ার আহ্বানে শাহবাগ থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে এসেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মি হোসেন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে ধরেন তারা। সেগুলো হল-
• বাংলাদেশ বর্তমানে কার শাসনে কোন বিধি অনুসারে চলছে? সেনাপ্রধানের, নাকি প্রেসিডেন্টের, নাকি স্পিকারের তত্ত্বাবধানে মন্ত্রীসভার অধীনে? ছাত্ররা অসহযোগের ডাক দিয়েছে। তাহলে তাদেরকে বাদ দিয়ে আইএসপিআর কোন ক্ষমতাবলে সকল কিছু খোলার ডাক দিল?
• গণভবন, থানাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা সুরক্ষায় পুলিশের উপস্থিতি নেই কেন? পুলিশের অবর্তমানে সেনাবাহিনী সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হল কেন?
• কোন আইনের বলে, এবং কোন কোন মানদণ্ডের আলোকে রাজনৈতিক নেতাদের বঙ্গভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে দেখা করার জন্য মনোনীত বা নির্বাচিত করা হল?
• সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা প্রদানে এবং চলমান সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন পদক্ষেপ এখন কে নিবে- রাষ্ট্রপতি নাকি সেনাবাহিনী?
• সেনাবাহিনীর কাজ হল গণঅভ্যুত্থানকে নিরাপত্তা প্রদান করা এবং গণ অভ্যুত্থানকারীদের এখনকার কাজ হল বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। এটা নিয়ে আলাপ না করে সেনাবাহিনী কর্তৃক বা সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার সংক্রান্ত আলাপ জনপরিসরে উঠছে কেন? কারা এই ধরনের আলাপ তুলছে?
• সর্বোপরি, গণঅভ্যুত্থান সফল করা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সমাজের বিভিন্ন শ্রমজীবী ও পেশাজীবী শ্রেণী, সিভিল প্রশাসন, এবং মিলিটারি প্রশাসনের সমন্বিত আলাপ ও আলোচনা না শুরু না করে বঙ্গভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করার মাধ্যমে জনগণকে কি বার্তা দেওয়া হচ্ছে?
সংবাদ সম্মেলনে গণআন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং অতি দ্রুত দেশের জনগণের সুরক্ষা এবং সহিংসতা বন্ধের জন্যও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
নতুন সংবিধান প্রণয়ণ করার দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে এর পরবর্তীতে একটি সংবিধান সভা গঠিত করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে এর আলোকে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আমরা করছি।”
দেশের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আগেই সেনাবাহিনীকেপেশাগত কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
“রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট, থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরের এবং বিখ্যাত ঐতিহ্য ময়মনসিংহের শশী লজসহ নির্বিচার ভাঙচুর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপরে হামলা, তাদের সম্পত্তি লুটপাট ও পোড়ানো শুরু হয়। আমরা এসব সহিংসতা বন্ধের অনুরোধ জানাচ্ছি।”
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যে ভাংচুর করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভাস্কর্যসহ শিল্প-সংস্কৃতির স্থাপনা সুরক্ষার দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।