হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ আমরা করেছি। এ বিষয়ে দুপক্ষ কাজ করবে।”
Published : 08 Apr 2025, 09:35 PM
ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাড়া না পাওয়ার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, এ বিষয়ে দুপক্ষ কাজ করবে।
মঙ্গলবার ঢাকায় পৃথক দুই ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কী প্রতিক্রিয়া ছিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন, বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, এটা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয় নাই। আমি এটুকুই বলব।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন ইউনূস-মোদী।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বরাতে বাসস জানিয়েছিল, বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ।
গত বছরের ৫ অগাস্ট প্রবল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এখনো সেখানেই আছেন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এছাড়া গোপন বন্দিশিবিরের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যেখানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা, গুম ও হত্যার মত ঘটনা ঘটত বলে অভিযোগ রয়েছে।
হত্যা, গুমসহ তিন মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সরকার ভারতকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালেও দিল্লি তার উত্তর দেয়নি।
হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি দিয়েছিল ঢাকা, এবার আহ্বানের জবাব কী পাওয়া গেল- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি যেটা বলছি, সেটা হলো এই রকম যে, এটা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো কথাবার্তা হয় নাই। কাজেই, আমরা এটাকে এখানেই রাখি। আমরাতো তাদের কাছে চেয়েছি যে, ফেরত দেওয়া হোক; তাকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য।”
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আরেক ব্রিফিংয়ে একই বিষয়ে প্রশ্নে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ আমরা করেছি। এ বিষয়ে দুপক্ষ কাজ করবে।
“ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক সেটা কোনো ব্যক্তি বা দলের সম্পর্ক নয়, এটা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমরাও কিন্তু তাই মনে করি। এটা দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক। সেই ভিত্তিতে আমরা দুটা রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কটা এগিয়ে নেব।”
সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলেও এখনও ভিসা চালু হয়নি, অস্বস্তি কাটার লক্ষণ না দেখা যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “জনগণ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক কথাটাতো একেকজন একেকভাবে নিতে পারেন। যেটা স্পষ্ট করা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাষায় বলেছেন যে, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক দেশের সাথে, মানুষের সাথে, এটা কোনো দলের সাথে নয়- এটা উনি স্পষ্ট করেছেন। এটা আমি এটাকে একটা ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসাবেই দেখতে চাই।”
ভিসার বিষয়ে তিনি বলেন, “ভিসা হচ্ছে একটা দেশের সম্পূর্ণ সার্বভৌম অধিকার। তারা যদি না দেয়, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। তাদেরকে আপনি বলতে পারবেন না, কেন দিচ্ছেন না? এই প্রশ্ন আপনি উত্থাপন করতে পারবেন না। আমরাও কিন্তু বন্ধ করে দিতে পারি। আমরা যেমন আগরতলাকে বন্ধ করে দিয়েছিলাম, সাময়িকভাবে। আবার আমরা খানিকটা চালু করেছি।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাইব যে, তারা ভিসা সহজ করুক। না হলে যেটা বিষয় হবে, সেটা হল যে, প্রকৃতিতেতো কোনো শূন্যতা থাকে না। যদি সেখানে ভিসার অভাবে লোকজন যেতে না পারে, তারা অন্য কোথাও যাবে এবং যাচ্ছে ইতোমধ্যে।
“আমরা সেটাও সহায়তা করব, সমস্যা যাতে না হয়। আমাদের লোকজন যে যে কারণে ভারতে যেত, সেই কারণগুলি যদি অন্য কোনো দেশে সমাধান করা যায়, আমরা সেটাও চেষ্টা করব।”
ভিসা দেওয়া পরিমাণ কমিয়ে আনায় ভারতেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাইব যে, ভারত সহজিকরণ করুক, কিন্তু এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার।
“তারা যদি চায় সহজিকরণ করবে; তাহলে তাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে, আমাদেরও স্বার্থ উদ্ধার হবে। কারণ, আমরা জানি যে, বিশেষ করে কলকাতার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, হাসপাতালগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভিসা না দেওয়ার কারণে।”
দুদেশে সম্পর্কে অস্বস্তি কাটার বিষয়ে সরকারের আশাবাদের বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “দুপক্ষ মিলেইতো সম্পর্ক আগাতে হবে। আমরা এটাকে চালু রেখেছি এবং আমরা আশা করব যে, আগামী দিনে সম্পর্ক আরও ভালো হবে।”
তিস্তা-গঙ্গা প্রসঙ্গে
প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরে তিস্তা প্রকল্পে কাজ করার বিষয়ে চীনা কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরপর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকেও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বলেছে সরকার।
তিস্তার ক্ষেত্রে কোন দেশের সঙ্গে বেশি অগ্রগতি হয়েছে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অগ্রগতি সময়সাপেক্ষে ব্যাপার। ঝট করে আমরা কোনো কিছু প্রত্যাশা করছি না যে, কালকেই কেউ এসে তিস্তা সমস্যার সমাধান কেউ করে দেবে।
“আমাদের একটা আমব্রেলা সমঝোতা স্মারক আছে, নদীর পানির বিষয়ে। নদীর পানি অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সবার জন্য। আমাদের জন্য বিশেষ করে। বিশেষ মওসুমি প্রবাহের ক্ষেত্রে যেখানে খুব বেশি তফাৎ হয়। এটা ব্যাপারে আলোচনার জন্য আমরা উন্মুক্ত আছি। ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও সম্ভব। কোনোটাতে কোনো বাধা নাই। আমরা দেখবে যে, কোনদিক থেকে সহায়তা নিয়ে আমাদের জন্য সুবিধা হবে এবং সে অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের কার্যকলাপ করবে।”
পানিবন্টন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “জেআরসি ব্যাপারে জানি, এটার কার্যকলাপ শুরু হয়েছে অগ্রগতি আরও পরে জানতে পারব।”
অন্যদিকে তিস্তা এবং গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেছেন, “গঙ্গা চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী বছর। আমরা দুপক্ষই যোগাযোগ রাখছি, যাতে করে এর আলোচনাগুলো সুন্দরভাবে শুরু হয়। আমাদের ধারণা, ভারতের কাছে এ ব্যাপারে আমরা ভালো সহযোগিতা পাব।
তিনি বলেন, “তিস্তার ব্যাপারে আমরা তাদেরকে জানিয়েছি। ১৪ শতাংশ মানুষ তিস্তার অববাহিকায় বাস করে। তাদের জীবনজীবিকা এর পানির উপর নির্ভর করে। তাদের জন্য ন্যূনতম পানির অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।
“আপনি ১৪% লোককে আপনি এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতে পারেন না। সেজন্য আমরা সবার সাথে কথা বলছি। ভারতকে বলছি, চুক্তিটা করার জন্য, চুক্তি করলেতো অন্য কিছু করার দরকার নাই। একইসঙ্গে অন্য অপশনগুলো আমাকে হাতে রাখতে হবে।”