এই দুর্বিপাকে পড়ে আড়াই ঘণ্টার পথ যেতে কাজী সালহ উদ্দীনের লেগেছে সাড়ে ৫ ঘণ্টা।
Published : 16 Feb 2025, 05:12 PM
দুদিন ছুটি কাটিয়ে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের কাজে যোগ দিতে রাস্তায় বেরিয়েই অটোরিকশা চালকদের অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা।
এবার শবে বরাতের সরকারি ছুটি পড়েছিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। তার আগে শুক্রবারও ছিল ছুটি। রোববার সকালে রাস্তায় নেমে মানুষ হঠাৎ করেই অটোরিকশা ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন।
রাস্তায় অটোরিকশা চলছে না, সেটা একটা সমস্যা। কিন্তু সমস্যাটা অনেক বড় হয়ে দাঁড়াল যখন অটোরিকশা চালকরা ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করতে শুরু করলেন।
তাদের অবরোধের কারণে ঢাকার দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী দিয়ে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঢাকার আশপাশের জেলা নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে রাজধানীতে প্রবেশে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এসব জেলার অনেকেই বাড়ি থেকে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন।
শহরের ভেতরেও শনির আখড়া, দোলাইপাড়, গোলাপবাগ, ডেমরা, বাসাবো, রামপুরা, কলেজগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন অটোরিকশা চালকরা। তাতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বিভিন্ন সড়কে। ভোগান্তিতে পড়েন চলতি পথের যাত্রীরা।
শনির আখড়ায় বাধা পেয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন দূর পাল্লার অনেক যাত্রী। হেঁটেই তারা গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েকটি বাস সার্ভিস লেইন দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে পারলেও বেশির ভাগ যানবাহন আটকে পড়ে। সার্ভিস লেন দিয়ে যে অল্প কিছু গণপরিবহণ চলাচল করেছে, সেগুলোও ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের কাউকে কাউকে দূরপাল্লার বাস থামিয়ে গুলিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সেখানে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী রুমিয়া খাতুনের সঙ্গে।
হাসপাতালের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তিনি কাজলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দীর্ঘ সময়। নার্সদের সঙ্গে আয়া হিসেবে কাজ করা রুমিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দ্যাখেন, কোনো বাস নাই। যাও আসে দু-একটা, ক্যামনে উঠুম। ডিউটিতে যামু গাড়ি পাইতাছি না।”
পরে চানখারপুলগামী একটি বাসের সহকারীকে অনুরোধ করে কোনোমতে দরজায় দাঁড়িয়ে রওনা হন তিনি।
যাত্রাবাড়ী, কাজলা থেকে গুলিস্তান যাওয়া নিয়মিত যাত্রীদের অনেকই উড়াল সড়কে উঠে হেঁটে গুলিস্তানে যান ঝুঁকি নিয়ে।
ঢাকার বনানীতে অফিসে যোগ দিতে রোববার সকাল ৭টায় নারায়ণগঞ্জ সদরে আসেন নাইমুর রহমান। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, “ঢাকায় থাকি, সপ্তাহের বন্ধের দুই দিন নারায়ণগঞ্জ যাই। সকাল ৭টায় গাড়ি ধরলাম, চিটাগাং রোড পর্যন্ত আইসা আর গাড়ি আগায় না। একটা ঘণ্টা বইসা থাকলাম।”
তিনি বলেন, “প্রতি রোবাবর দুই ঘণ্টা হিসাব কইরা বাহির হই বনানী যাইতে। ওই সময়ে রাস্তা ফাঁকা থাকে। ৯টায় অফিসে থাকার কথা। এহন সাড়ে ১০টা বাজে কেবল আইলাম গুলিস্তান।”
পাটুরিয়া ঘাটগামী বাসে চড়ে ঢাকায় আসা নাইমুর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের গুলিস্তান অংশের ওপরে নেমে যান। উড়াল সড়কের ঢাল ধরে নিচে নামতে শুরু করেন।
নাইমুর রহমানের মত ঢাকায় আসতে সমস্যার মধ্যে পড়েছেন গাজিপুরের নূর মোহাম্মদও। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার অফিস মালিবাগ মোড়ে। সব ঠিকঠাক, গাজীপুর থেকে আসলাম রামপুরা পর্যন্ত। এরপর আর গাড়ি চলে না।”
বাধ্য হয়ে রামপুরা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেই যেতে হয়েছে তাকে।
অটোরিকশা চালকদের অবরোধে কষ্টের কথা ফেইসবুক গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টে লিখেছেন আরিফ হোসেইন। হাতিরঝিলের একটি অংশ আটকে দেওয়ার ছবিও তিনি শেয়ার করেছেন।
একই গ্রুপে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকার ভিডিও দিয়ে রুশো হাসান জয় লিখেছেন, শ্যামলী, কলেজ গেটের দিকে আসতে চাইলে সময় নিয়ে বের হতে হবে। কারণ আসাদ গেট মোড় আটকে দিয়েছেন অটোরিকশা চালকরা।
সড়কে এই দুর্ভোগের কথা নিজের ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন কাজী সালহ উদ্দীন। তিনি লিখেছেন, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে টঙ্গী-আব্দুলাহপুর থেকে বাসে উঠে দুপুর ১টায় কমলাপুরে পৌঁছাতে পেরেছেন।স্বাভাবিক সময়ে দিনের বেলা এ পথ পাড়ি দিতে দুই-থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিআরটিএ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে। সেখানে বলা হয়, গ্যাস বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা করার ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ করা হল।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৩৫(৩) ধারা অনুযায়ী, মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যায়।
বিআরটিএ পুলিশকে মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর আন্দোলনে নামেন ক্ষুব্ধ অটোরিকশা চালকরা। রোববার সকাল থেকে শুরু হয় তাদের ধর্মঘট। রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
ওই অবস্থায় পুলিশের উদ্যোগে বিআরটিএ সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নিলে অবরোধ তুলে গাড়ি চালানো শুরু করেন অটোরিকশা চালকরা।