ঢাকায় মুঘল স্থাপত্যের একমাত্র অক্ষত নিদর্শন লালবাগ কেল্লার সীমানা প্রাচীরের উত্তর-পশ্চিম দিকের একটি অংশের দেওয়াল ভেঙে গাড়ি রাখার জায়গা তৈরি করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
Published : 26 Jun 2015, 08:16 PM
এর মধ্য দিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনের সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন।
তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বলছে, “যে অংশটি ভাঙা হয়েছে সেটি প্রত্ন নিদর্শন না হওয়ায় এটি ভাঙায় স্থাপত্যের সৌন্দর্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
আর স্থানীয়রা বলছেন, এর আগেও কয়েকবার ওই দেওয়াল ভাঙা ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা লালবাগ কেল্লার যে পাশে রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিতদের কার্যালয় তার এক কোণে ১০ ফুটের মতো জায়গা নিয়ে দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। দেওয়াল ভেঙে সেখান থেকে ভিতরে কয়েক ফুটজুড়ে ইট-বালু বিছানো হয়েছে।
কেল্লার সীমানা প্রাচীরের দেওয়াল ভেঙে গাড়ি রাখার জায়গা তৈরির এ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। সংগঠনটির পক্ষ খেকে ওই জায়গা পরিদর্শন করা হয়েছে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, “এভাবে দেওয়াল ভেঙে গাড়ি রাখার স্থান তৈরি করে লালবাগ কেল্লার মতো পুরাকীর্তিকে ধ্বংস করা হচ্ছে, যা ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনের পরিপন্থি।
‘সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ও প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায়’ এ কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, গত কয়েক বছরে লালবাগ কেল্লার এ অংশের সীমানাপ্রাচীর সংলগ্ন এলাকায় ‘অবৈধভাবে’ তিনটি ভবন তৈরি করা হয়। এরমধ্যে একটি ভবনের দখল অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় সেটি উচ্ছেদ করে লালবাগ কেল্লা কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও দুটি বহুতল ভবন লালবাগ কেল্লার জমি দখল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মো. সাগর নামে লালবাগের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে দেওয়ালটি ভাঙা হয়েছে এটি পুরাতন দেওয়াল নয়, এটি কয়েক মাস আগেই তৈরি করা হয়েছে। এ স্থানটি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হত। অনেকে মাদক সেবনও করত।”
লালবাগ কেল্লা ও জাদুঘরের কাস্টডিয়ান সুলতানা জাকিয়া বেদৌরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে স্থানে পার্কিংয়ের জায়গা তৈরি করা হচ্ছে সে স্থানটি দীর্ঘদিন অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। ২০১৪ সালের মে মাসে এটি কেল্লা কর্তৃপক্ষের দখলে আসে, মূলত সে সময়ই এখানে পার্কিং স্পেস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
“যে দেওয়ালটি ভাঙা হয়েছে এটি পুরাকীর্তির অংশ নয়, এটি তৈরি করা হয়েছে স্বাধীনতার পরে। যারা আন্দোলন করছেন তারা না জেনেই আন্দোলনে নেমেছেন।”
তিনি বলেন, “আমদের কাজ পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা, ধ্বংস করা নয়। এখানে যে পার্কিং স্পেস বানানো হচ্ছে সেটি হবে অস্থায়ী। যদি দেখা যায় কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে বা কেল্লার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে তাহলে এটি সরিয়ে নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, “যে অংশটি ভাঙা হয়েছে সেটি যদি মূল স্থাপত্য না হয় তাহলে এটি ভাঙায় কোনো সমস্যা নেই। এটাও ঠিক যে লালবাগ কেল্লার জন্য একটি পার্কিং স্পেস প্রয়োজন। আর এটি তৈরি করতে গিয়ে যদি মূল স্থাপত্যে কোনো প্রভাব না পড়ে, তাহলে এটি হতেই পারে।”
“একদিকে তারা যেমন অবৈধ উচ্ছেদ করছেন, সেখানে এরকম একটি পার্কিং স্পেস কেন নির্মাণ করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। যে স্থানটিতে পার্কিং স্পেস তৈরি করা হচ্ছে এটি একটি গার্ডেন স্পেস, এখানে বাগান করলে কেল্লার নান্দনিকতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।”
২০০৯ সালে সরকারি গেজেটে দেশের ৯৩টি ভবন ও চারটি এলাকাকে হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়, যার মধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম।
ঢাকায় আরও দুটি মোঘল স্থাপত্য ছোট কাটরা ও বড় কাটরাও হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু এ দুটোর মধ্যে লালবাগ কেল্লাই তুলনামূলক অক্ষত রয়েছে। অবৈধ দখলের কারণে প্রায় ধ্বংসের মুখে রয়েছে বাকী দুটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত ১০০ বছর বা তার বেশি পুরনো স্থাপনাকে হেরিটেজের তালিকায় রাখা হয়। ওই তালিকাভুক্ত স্থাপনা ভেঙে নতুন স্থাপনা গড়তে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে হেরিটেজ তালিকায় থাকা এসব স্থাপনা ভাঙতে হলে রাজউকের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো তদরকি নেই।