হোম
+
রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গারো তরুণী ধর্ষণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ১০ জনকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
Published : 24 May 2015, 04:51 PM
একইসঙ্গে পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিষয়ে কথা বলায় পুলিশকে সর্তক করে দিয়ে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি ১০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিটি পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছে।
“আমরা বলেছি, আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ঘটনা ঘটনার পরে সতর্ক হয়ে লাভ নেই। এখনই তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
“আমরা পুলিশকে বলেছি, ‘ওভারঅল’ তাদের পারফর্মেন্স ভালো। কয়েকটি ঘটনায় তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো নিয়ে আরও যত্নবান হতে বলা হয়েছে। ”
হুমকি দিয়ে চিঠি কারা পঠিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করতে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার ‘আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলা টিম: ১৩’ এর নামে পাঠানো চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সংসদ সদস্য তারানা হালিম, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন, বিকাশ সাহা, ইকবালুর রহিম ও পলান সুতারের নাম রয়েছে।
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে টিপু বলেন, “আমরা আলাদা করে কিছু বলিনি। ‘ওভারঅল’ বিষয়গুলো (ব্লগার হত্যাসহ ১০জনকে চিঠি) নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি।”
গারো তরুণী ধর্ষণ
গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, “আমরা পুলিশকে ইমিডিয়েট অ্যাকশন নিতে বলেছি। গণমাধ্যমে খবর এসেছে একজনকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে। আমি এটা বৈঠকে তুলেছিলাম। তারা (পুলিশ) এগ্রি করেছে।
“গ্রেপ্তারকৃতর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে পুলিশকে আরও জোরদার ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত এক গারো মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি দেড়ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনার পর শুক্রবার ভাটারা থানায় মামলার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মেয়েটিকে ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়।
যৌন নিপীড়ন-অভিজিৎ হত্যা: পুলিশের গাফিলতি নেই
বৈঠকে পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে যৌন নিপীড়ন এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ নিজেদের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে।
গত ২২ মার্চ কমিটির বৈঠকে অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার সময় পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। বৈঠকে নারী নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি বলেন, “পুলিশ বলেছে তাদের কোন গাফিলতি ছিল না। তারা নিজেরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছে। হত্যকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। আমরা দ্রুত এর তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলেছি।”
নারী নিপীড়নের বিষয়ে তিনি বলেন, “পুলিশকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথার মধ্যে মিল নাই। পুলিশ কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না বলছে। আবার পরে কয়েকজনের ছবি দিয়ে পুরষ্কার ঘোষণা করা হল। এরকম কেন হচ্ছে? যেটা সত্য, সেটা প্রকাশ করা হোক।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কথা বলার বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার সাথে জড়িত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রদান এবং পুলিশ বাহিনীকে কর্তব্য পালনে আরও তৎপর হওয়ার সুপারিশ করা হয়।”
টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শামসুল হক টুকু, ফরিদুল হক খান, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম ও কামরুন নাহার চৌধুরী অংশ নেন।
