ভোট পর্যবেক্ষণে নিবন্ধিত না হওয়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘তিন সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই নির্বাচন কমিশনের।
Published : 19 May 2015, 10:04 PM
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দুর্বলতার সমালোচনা করা দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহও প্রকাশ করেছে। তবে এ নিয়ে অনাগ্রহ রয়েছে ‘ক্ষুব্ধ’ ইসির।
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিবেচনার জন্য বিশেষ বাহক মারফত ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ’ প্রতিবেদন পাঠান টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
সদ্য শেষ হওয়া তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই গবেষণার উপস্থাপনা, সারসংক্ষেপ ও এ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর বিবেচনার জন্যে চিঠির সঙ্গে দিয়েছেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে লিখেছেন, “সুপারিশমালাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোনো বিষয়ে আপনার সম্মতি সাপেক্ষে উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে আলোচনা করতে আমরা আগ্রহী।”
সোমবারেরর প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে তিন সিটিতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থার তালিকাভুক্ত নয় টিআইবি। তাদের প্রতিবেদন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। এ নিয়ে আমরা চিন্তাও করছি না; প্রতিক্রিয়ারও কিছু নেই।”
টিআইবি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বললেও ইসির কোনো কর্মকর্তা টিআইবির কাছে কোনো বক্তব্য দেয়নি বলেও দাবি করেন এ নির্বাচন কমিশনার।
বর্তমান ইসির ‘নেতৃত্ব দুর্বলতা’ নিয়ে কথা বলায় তা ‘বাড়াবাড়ি’ বলেও মন্তব্য করেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “টিআইবি কে? তাদের কেউ তো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি। তারা কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করল, প্রার্থীদের এত ব্যয়ের তথ্য তাদের কে দিল? যে তাদের তথ্য দিয়েছে, তার সত্যতা কতটুকু? টাকা দিয়ে লোক নিয়োগ করে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করল-তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”
টিআইবির সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদাও ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।
ওই প্রতিবেদন নিয়ে টিআইবির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
শাহনেওয়াজ বলেন, “আগ্রহ থাকলে থাকুক। এটা তো আমার একার বিষয় নয়। কমিশনের সবাই যা বলবে, তখন দেখা যাবে।”
গত ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচন হয়। গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচিতরা শপথও নিয়েছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব নিয়েছেন।
ভোটের দিন অনেক অভিযোগ এসেছিল। কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটগ্রহণের মাঝ পর্যায়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাও দেন।
ভোটের পর গত তিন সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন। আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিংয়ের আয়োজনও ছিল না ইসি সচিবালয়ের।
নির্বাচন কমিশন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ টিআইবির পর্যবেক্ষণকে ‘একচোখা’ বলে নাকচ করেছেন।
তার দাবি, ভোটসহ সব বিষয়েই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ শুধু নেতিবাচক দিকগুলোই দেখে।
৬০ লাখ ভোটার, টিআইবির তথ্য সংগ্রহে ৮৭২
দুই কোটিরও বেশি জনঅধ্যুষিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। ৬০ মেয়র প্রার্থী ও ১১ শতাধিক কাউন্সিলর ছিল এ ভোটে। তিন নগরে কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৭০১টি।
অর্ধলক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পৌনে এক লাখ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, সাড়ে পাঁচ হাজার সাংবাদিক, দুই হাজার পর্যবেক্ষক, কয়েক লাখ নির্বাচনী এজেন্ট মাঠে ছিল।
টিআইবি জানিয়েছে, মাসব্যাপী ভোট কার্যক্রমে ৮৭২ জনের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে তথ্যদাতারা হলেন মেয়র ৭ জন, কাউন্সিলর ৫১, নির্বাচনী এজেন্ট ৫৮, প্রার্থীর কিংবা দলীয় কর্মী ২০৪, রাজনৈতিক নেতা ৩৭, ভোটার ও জনগণ ৩৩৩, সাংবাদিক ৩৮, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ৪২, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ৫, নির্বাচনী কর্মকর্তা ৬৯, বিশেষজ্ঞ ৪ ও অন্যান্য ২৪ জন।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা অন্যদের মতো (নির্বাচন) পর্যবেক্ষণ সংস্থা নই। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে এ পর্যবেক্ষণ তৈরি করেছি।”