সব ছিল ‘স্বাভাবিক’!

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৩০টি ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এ ধরনের ‘রিপোর্ট’ পাওয়ার কথা খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করেছেন; কিন্তু ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটির সামনে বলে গেলেন- সব ছিল ‘স্বাভাবিক’।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2015, 05:04 AM
Updated : 18 May 2015, 01:41 PM

ইসির এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (সার্বিক) কাছে রোববার প্রথম দফায় ৩০টি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান ছাড়াও যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) ও ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় শাখার উপ সচিব এ কমিটির সদস্য।

৩০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার একজনও যে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করেননি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একজন।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা মৌখিক ও লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করেছেন। কয়েক মিনিট কেন্দ্রে ঘুরেছেনও। তবে ভোটকেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ ছিল। বাধা দেওয়া ও নাজেহালের কোনো ঘটনা ‘ঘটেনি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কমিটির কাছে আমরা বক্তব্য দিয়ে এসেছি। এখন সেখান থেকেই এ বিষয়ে জেনে নিতে পারেন।”

ভোটকেন্দ্রে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এ ব্যাংক কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তদন্ত কমিটির সদস্য ইসির উপ সচিব আব্দুল অদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংশ্লিষ্ট ৩০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। তাদের বক্তব্য আমরা পেয়েছি। পুলিশ সদস্যদের শুনানি হবে ২০ মে। এ মাসের শেষে ভুক্তভোগী সাংবাদিকদেরও বক্তব্য নেওয়া হবে।”

সবার বক্তব্য নিয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন কমিশন সচিবালয়ে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। ভোটের পরে সাংবাদিকদের বাধার বিষয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি তদন্ত কমিটি করে ইসি।

যে পাঁচটি বিষয়ে বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি

ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে কোনো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন কিনা এবং কতক্ষণ সেখানে ছিলেন; কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন ছিল; কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে কিনা; ঘটে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে তা জানানো হয়েছিল কিনা; এবং ভোটকেন্দ্র নিয়ে অন্য কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য রয়েছে কিনা।

সেগুনবাগিচায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রোববার বেলা ১১টার দিকে ৩০ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। তাদের প্রাথমিকভাবে শুনানির বিষয়ে জানানো হয়।

তাদের বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের কোনো অনিয়ম বা ভোটারদের অভিযোগ বা প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে এ শুনানি নয়। বরং নীতিমালা মেনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা বা নাজেহালের যেসব অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য নেওয়া হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ৩০টি ভোটকেন্দ্রের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদেরই ডেকেছিল এ তদন্ত কমিটি।

এর মধ্যে হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র ১ ও ২); জামিয়া মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া কড়াইল টিঅ্যান্ডটি কলোনি মাদ্রাসা (কেন্দ্র ১ থেকে ৬); বাসাবো উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৪); শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মাহবুব আলী ইন্সটিটিউট; ঢাকা বধির হাই স্কুল (কেন্দ্র ১ ও ২); সেগুন বাগিচা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৩); লালবাগ মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র ১ থেকে ৪); সেন্ট্রাল উইম্যান্স কলেজ (কেন্দ্র ১ ও ২); সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল (কেন্দ্র ১ ও ২), দক্ষিণ মুহসেন্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৩) এবং ‍শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রও রয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল ভোটের দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, দিনভর অনেক অভিযোগ তারা পেয়েছেন।

“অভিযোগ তদন্ত করছি এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিচ্ছি। যেসব কেন্দ্রে আমরা এ ধরনের প্রমাণ পেয়েছি, সেগুলোর ওপর আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেগুলোতে এরকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি সেগুলোতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধার বিষয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নীতিমালা পড়ে শোনানোর কথাও সেদিন তুলে ধরেন তিনি।

সিইসি বলেন, “আমরা সকালে আপনাদের কাছ থেকে এ রিপোর্ট পেয়েছি। তাক্ষণিকভাবে আমরা সমস্ত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি, তাদের পর্যবেক্ষণ নীতিমালা পড়ে শুনিয়েছি।”