একাত্তরের আলবদর কমান্ডার মুহাম্মদ কামারুজ্জামান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই একবার গ্রেপ্তার হলেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার ফাঁসি কার্যকর হলো চার দশক পর।
Published : 12 Apr 2015, 02:20 AM
কামারুজ্জামানের সঙ্গে স্বজনদের শেষ দেখা
কামারুজ্জামানের কবর খোঁড়া হচ্ছে শেরপুরে
কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে গণজাগরণ মঞ্চের আনন্দ মিছিল
কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের পথে
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন আলবদর বাহিনী।
সে সময় ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইলে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর দায়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে শনিবার কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গ্রেপ্তার হলেও পরে ছাড়া পেয়ে যান কামারুজ্জামান। পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময় তিনি রাজনীতিতে ফেরেন এবং দলে সক্রিয় হন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য ২০০৭ সালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি দায়ের করা হয় কেরানীগঞ্জ থানায়, অন্যটি পল্লবী থানায়।
এসব মামলার অপর আসামি মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।
ওই বছর ২১ জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। এর চারদিনের মাথায় কামারুজ্জামানকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে প্রসিকিউশন।
২২ জুলাই ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম তৈয়েবুল হাসান কেরানীগঞ্জের মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। ২ অগাস্ট কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখতে বলে আদালত।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের ৪ জুন। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন।
হত্যা ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল-২।
কামারুজ্জামান ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আপিল না করলেও আসামির আবেদনের বিরোধিতায় শুনানি করে।
আপিল দায়েরের এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ জুন এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরদিন কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
আসামির আইনজীবীরা ৫ মার্চ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। দুই দফা পিছিয়ে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয় ৫ এপ্রিল।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ৬ এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। রায়ে বিচারকদের স্বাক্ষরের পর ৮ এপ্রিল তা আসামি কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকলেও এই যুদ্ধাপরাধী তা নেননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।