রায়ে বলা হয়েছে, কায়সার নিজে ধর্ষণ না করলেও ওই গ্রামের দরিদ্র নারীদের জোর করে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের হাতে ধর্ষণের জন্য তুলে দিয়ে যে অপরাধ করেছেন তা ‘হত্যার চেয়েও জঘন্য, বর্বর’।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির আমলের এই প্রতিমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করে।
রায়ে বলা হয়, কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে আদালত কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
৮ ও ১২ নম্বর অভিযোগে হীরামনি ও মাজেদা নামের দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা এসেছে, যাদের কায়সার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে মাজেদা এবং তার গর্ভে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার এ মামলায় সাক্ষ্যও দিয়েছেন।
রায়ের পর প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে কোনো যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিল ট্রাইব্যুনাল।”
১৬ নম্বর অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামে ১০৮ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার ঘটনায় কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে। এ অভিযোগেও তাকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সাজা।
এছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কায়সারকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
২ নম্বর অভিযোগে তাকে ১০ বছর, ৭ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর এবং ১১ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রসিকিউশন ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে না পারায় কায়সারকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
সাতটি অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজার রায় আসায় কায়সারকে আর জেল খাটতে হবে না। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, কায়সার একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত সহযোগী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের মানুষ তাকে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসাবেই চেনে।
“কায়সার এতোটাই নগ্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন যে নিজের গ্রামের নারীদের ভোগের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হননি।”
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর গ্রামে হামলা চালায় সৈয়দ মো. কায়সার, তার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেখানে অন্তত ৫৫টি ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কায়সারের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অহিদ পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকায় আব্দুল আজিজ, আব্দুল খালেক, রেজাউল করিম, আব্দুর রহমান এবং বড়বহুলা এলাকার আব্দুল আলী ওরফে গ্যাদা উল্লাহ, লেঞ্জাপাড়া এলাকার মাজত আলী ও তারা মিয়া চৌধুরীকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
সাতজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনার পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় কায়সারকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পর হবিগঞ্জ সদরের পুরানবাজার পয়েন্টে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি এম মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলা হয়। এছাড়া লস্করপুর রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
দুইজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনায় পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ৮: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে সাঁওতাল নারী হীরামনিকে ধর্ষণ করে সৈয়দ কায়সারের বাহিনী। সৈয়দ কায়সার এ সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় কায়সারের ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
অভিযোগ ১০: ১৩ জুন হবিগঞ্জ সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর অ্যান্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকায় হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এ সময় শাহ ফিরোজ আলী নামের একজনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সাবু মিয়া নামের আরেকজনকে অপহরণের পর চালানো হয় নির্যাতন।
এ ঘটনায় হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ১২: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী অগাস্টের মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার বেলাঘর ও জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে। মাজেদাকে আটকে রেখে টানা কয়েক দিন গণধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণের এ ঘটনায় সহযোগিতার দায়ে কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অভিযোগ ১৬: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবড়িয়ার ভাটপাড়া থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনা, নূরপুর, ফুলপুর, জেঠাগ্রাম, পাঠানিশা, কুলিতুণ্ডা, আন্দ্রাবহ, তিলপাড়া, কমলপুর, গঙ্গানগর, বাঘি, শ্যামপুর, কুয়ারপুর, নোয়াগাঁও, কুণ্ডা, লক্ষীপুর, করগ্রাম গ্রামের ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
গণহত্যার এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আমৃত্যু কারাদণ্ড
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে সৈয়দ কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর থানা এলাকায় যায়। কায়সারের নির্দেশে ইসলামপুর থানার সামনে জনৈক শাহজাহান চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। একইদিনে একই থানাধীন কাজীবাড়ী এলাকায় নায়েব আলী নামে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজনকে নির্যাতন করা হয়। পরে কাজীবাড়ী এলাকার ১৫টি ঘরবাড়ি লুটপাটও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ৯: ১৯৭১ সালের ১৫ মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এদিন আকরাম আলী চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) নামে একজনকে জখমও করেন সৈয়দ কায়সার।
নয়জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনায় পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখায় সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অভিযোগ ১৩: ১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট হবিগঞ্জের নলুয়া চা বাগান থেকে মহিবুল্লাহ, আবদুস শহীদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নরপতিতে আব্দুস শাহীদের বাড়ি ও রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় এবং কালাপুরের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
হত্যার এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ১৪: ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকা থেকে সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আব্দুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কারাদণ্ড
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সৈয়দ মো. কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকায় মাধবপুর বাজারের পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারা বাজারে ১৫০টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লুটপাট করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক কামিনী রায়, বিনোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের সম্পত্তি আগুন দিয়ে ধ্বংস করে।
এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ৭: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালের ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার ওপর নির্যাতন চলে। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করে তার বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দয়াল গোবিন্দ রায় ওরফে বাদল কর্মকারের বাড়িতে হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। লুটপাটের পর ওই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখায় কায়সারকে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
খালাস
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে আসামি সৈয়দ মো. কায়সার, তার ‘কায়সার বাহিনী’র ১০/১৫ জন সদস্য এবং ৩০/৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে মাধবপুর বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া গুলিতে সাত্তার, বরকত আলীসহ ১৫জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। একইসঙ্গে দেড়শ থেকে দুইশ বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয় তারা।
অভিযোগ ১৫: অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
এ দুটি অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় কায়সারকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।