মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে দেওয়া ফাঁসির রায় বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
Published : 23 Dec 2014, 12:45 PM
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার ৭৪ বছর বয়সী এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত পরে সাংবাদিকদের জানান, কায়সারের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে সাতটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড, চারটিতে যাবজ্জীবন, দুটিতে ১০ ও ৭ বছর এবং একটিতে ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আর দুটি অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, “এ রায়ে আমরা আনন্দিত।”
তিনি জানান, যুদ্ধ শিশুদের জন্য ‘কমপেনসেশন স্কিম’ চালু ও তাদের পুনর্বাসনে রাষ্ট্রের ভূমিকা নেওয়া উচিৎ বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের ‘ওয়ার হিরো’ উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেখা উচিৎ।
আরেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, “এ রায় একটি বিরাট অর্জন।এ রায় আমরা একাত্তরের বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধ শিশুদের প্রতি উৎসর্গ করছি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে আড়াই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন বলে ধারণা করা হয়। নির্যাতিত এই নারীদের অনেকেই সে সময় গর্ভবতী হয়ে পড়েন, জন্ম নেয় অনেক যুদ্ধশিশু। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নারীদের সম্মান জানান তাদের বীরাঙ্গনা বলে। চলতি বছর নির্যাতিত এই নারীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
১৯৭২ সালে অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক জিওফ্রে ডেভিস এই ধর্ষিতা নারীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন। তার ভাষায়,পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরে ধর্ষণকে বাঙালির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করে।
সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রমাণিত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে দুটি ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে। ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন মুসলিম লীগ নেতা কায়সার।
জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও পরে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির নেতা বনে যান।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “এই মামলায় ব্যতিক্রমী অনেকগুলো বিষয় আছে। এই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধ মামলায় আসামির যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার কোনো নারী এসে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একজন যুদ্ধশিশু আদালতে দাঁড়িয়ে আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
“এছাড়া একাত্তরে কায়সার বাহিনীর অন্যতম একজন সদস্য (তাজুল ইসলাম) তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। ওই সাক্ষী বলেছেন, কায়সারের সঙ্গে যুক্ত থেকে একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনুতপ্ত। সেই অনুতাপ থেকেই সে সাক্ষ্য দিতে এসেছে।”