মানবতাবিরোধী অপরাধে এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
Published : 07 Aug 2014, 07:05 PM
বৃহস্পতিবার শেষ দিনের আইনি যুক্তিতর্কে কায়সারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যৃদণ্ডের পাশাপাশি মামলার তিন সাক্ষীর (দুই বীরাঙ্গনা ও এক যুদ্ধশিশু) জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চেয়েছে প্রসিকিউশন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ এ দাবি উত্থাপন করেন।
পরে সাংবাদিকদের তুরিন আফরোজ বলেন, “প্রসিকিউশন সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে যে ১৬টি অভিযোগ এনেছে তার সবকটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।ফলে আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছি।”
“তবে এ মামলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একজন যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মামলায় কোনো যুদ্ধশিশু সাক্ষ্য দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, সাধারণত বিশ্বের যুদ্ধশিশুদের জন্মবৃত্তান্ত ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়,এতে তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের ন্যায় বিচার চাওয়ার সুযোগ থাকে না।
“কিন্তু এক্ষেত্রে যুদ্ধশিশুদের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।এ মামলায় একজন পূর্ণবয়স্ক যুদ্ধশিশু সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি সমস্ত যুদ্ধশিশুদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায় বিচার চেয়েছেন।”
এ মামলার দশম সাক্ষী ছিলেন একজন যুদ্ধশিশু, যার নাম ও ঠিকানা সাক্ষ্যগ্রহণের সময় গোপন রাখা হয়েছিল। তার মায়ের নামও গোপন রাখা হয়।
তবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনশেষে তাদের পরিচয় প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। যুদ্ধশিশু সামসুন নাহার (৪২) ও তার মা মাজেদা (৭০) দুইজনই এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।
এছাড়া বীরাঙ্গনা হীরামতি সাঁওতাল নিজে সাক্ষ্য না দিলেও তাকে নির্যাতনের ঘটনায় সাক্ষ্য দেন দুইজন সাক্ষী বাসু সাঁওতাল ও আব্দুল মোতালেব।
ক্ষতিপূরণ কে দেবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তুরিন আফরোজ বলেন, “প্রসিকিউশন অভিযুক্ত কায়সারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের (ভিকটিম) জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছে।’
“যদি ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতো সামর্থ্য আসামির না থাকে, তবে সে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে।”
এর আগে বুধবার কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে সাক্ষীদের দেয়া সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণভিত্তিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। এরপর আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের প্রস্তুতির জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় আবেদন করেন তিনি।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনকে বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত সময় দেন।
আইনি যুক্তিতর্কের শুরুতেই প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল যৌথ উদ্যোগে অপরাধ সংঘটনের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন।এরপর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।
মধ্যাহ্ণ বিরতির পরে কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। পরে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।