দীর্ঘ নয় বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আবার শুরু হচ্ছে।
Published : 31 Aug 2014, 04:01 PM
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে মিয়ানমার সরকার।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরুর পর দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান চি। শহীদুল হক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে।
জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন।
এর বাইরে আরো প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও মনে করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও ২০০৫ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকে। তার আগ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয় বলে কর্মকর্তারা জানান।
২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গার পর নতুন করে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে শুরু করে এবাং আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও সরকার তাতে সায় না দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে জোর দেয়।
ওই দাঙ্গার পর বাংলাদেশে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক থাকার কথাও অস্বীকার করে দেশটির সামরিক জান্তা। এমনকি দীর্ঘ তিন দশক পর গত মার্চ-এপ্রিলে মিয়ানমারে আদম শুমারি হলেও তাতে রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করার সুযোগ দেয়া হয়নি বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর।
পররাষ্ট্র সচিব মনে করেন, প্রত্যাবাসনে রাজি হয়ে মিয়ানমার কার্যত স্বীকার করল যে বাংলাদেশ অবস্থানরত রোহিঙ্গারা তাদেরই নাগরিক।
এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার নিরসন হলো মন্তব্য করে সচিব বলেন, দুই পক্ষই মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে আন্তরিক।
শহীদুল হক জানান, দুই দেশের কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় কাজ করবে।
মিয়ানমার কতো দিনের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে সে বিষয়ে বৈঠকে নির্দিষ্ট সময়সীমা চান বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে বর্তমানে কতো রোহিঙ্গা বসবাস করছে তার একটি সংখ্যা মিয়ারমারের প্রতিনিধিদের জানানো হয়।
দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে একটি যৌথ কমিশন গঠেনের সিদ্ধান্ত হয় বলেও পররাষ্ট্র সচিব জানান।
নিরাপত্তা ও সহযোগিতা, যোগাযোগ ও বাণিজ্য, জ্বালানি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষে ‘কাঠামো চুক্তি’র একটি খসড়া প্রস্তাব বৈঠকে তুলে ধরে বাংলাদেশ।
সচিব বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ধরনের চুক্তি রয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি হবে।