মিয়ানমারের সঙ্গে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক ‘আস্থাহীনতা’ প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে তারা।
Published : 30 Jun 2014, 08:33 PM
সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘আস্থা’ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছে কমিটি।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে মূল বাধা আস্থাহীনতা। কমিটি এজন্য মন্ত্রণালয়কে দুই দেশের মধ্যে আস্থা অর্জনে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে।
“ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।”
সাবেক বাণিজ্য ও বিমানমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দীর্ঘদিনের। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাড়িয়ে এসব সমস্যা দূর করতে হবে।”
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে কী ধরনের ‘আস্থাহীনতা’ কাজ করছে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি দীপু মনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা জানান, সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ হিসেবে বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকা-ইয়াঙ্গুন ফ্লাইট চালু করা হতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ফ্লাইট চালু করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
চাপ কমেছে রোহিঙ্গায়
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্য সম্পর্কে আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটিকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক ‘চাপ’ আগের চেয়ে কমেছে। বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্পষ্ট হওয়ায় এটা ঘটেছে বলে মন্ত্রণালয় মনে করছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ মানবিক দিক থেকে এ বিষয়টি দেখছে।”
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি দীপু মনি বলেন, “সরকার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে কৌশলপত্র গ্রহণ করেছে সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা গণনার কার্যক্রমও শুরু হবে। একই সঙ্গে সরকার এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।”
প্রায় দুই দশক আগে মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে সে দেশের মুসলিম নাগরিক রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার সরকার।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
এর বাইরে আরো প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলেও মনে করা হয়।
বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ শরণার্থী অধিকার দিতে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। সম্প্রতি কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নতুন করে জরিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর।
দীপু মনির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ফারুক খান, কাজী নাবিল আহমেদ, মো. সোহরাব উদ্দিন, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, সেলিম উদ্দিন ও মাহজাবিন খালেদ অংশ নেন।