পিনাক-৬ লঞ্চটির জন্য তল্লাশি অভিযানের ষষ্ঠ দিনে পদ্মা নদীর তলদেশে ধাতব একটি বস্তুর অবস্থান ধরা পড়েছে যন্ত্রে।
Published : 09 Aug 2014, 04:19 PM
এর দৈর্ঘ্য ডুবে যাওয়া লঞ্চের প্রায় সমান বলে এটিই পিনাক-৬ বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও কর্মকর্তারা এখনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে নারাজ।
ধাতব বস্তুটির অবস্থান নির্ণয়ে ডুবুরি নামানোর পাশাপাশি নোঙর ফেলা হচ্ছে। তবে পদ্মায় তীব্র স্রোতে ব্যাহত হচ্ছে কাজ।
কাওড়াকান্দি থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়া আসার পথে গত ৪ অগাস্ট পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর থেকে তল্লাশি চললেও এর কোনো খোঁজ মেলেনি।
নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস কয়েকটি অনুসন্ধান জাহাজ নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে, লঞ্চটি সনাক্তের পর উদ্ধার অভিযান শুরুর জন্য তৈরি আছে জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীক।
এর মধ্যেই শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের টাগবোট কাণ্ডারি-২ এর যন্ত্রে নদীর নিচে ধাতব বস্তুর অবস্থান ধরা পড়ে।
কাণ্ডারি-২ এর ইনচার্জ ও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার ক্যাপ্টেন মঞ্জুরুল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “এই বস্তুটির সঙ্গে এ্যাঙ্কর (নোঙর) লাগানোর চেষ্টা চলছে। এ্যাঙ্কর লাগানো সম্ভব হলে এই রশি ধরেই ডুবুরিরা সেখানে পৌঁছতে পারবে।”
“তবে এখন পানিতে প্রবল স্রোত থাকায় নামা যাচ্ছে না। ৬টা ৩৪ মিনিটে (সন্ধ্যা) ধাতব বস্তুটি একবার এ্যাঙ্করের সঙ্গে আটকে ছিল। ৬ মিনিট থাকার পর আবার ছুটে যায়। তবে চেষ্টা চলছে।”
এটি স্রোতের সঙ্গে সরে যাচ্ছে বলেও জানান নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মঞ্জুরুল।
“তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, ধাতব পদার্থটি স্থির থাকছে না। খুব ধীরে হলেও স্থান পরিবর্তন করছে। অর্থ্যাৎ নদীর তলদেশে প্রচুর কারেন্ট (স্রোত) রয়েছে। একারণে ধাতব এই খণ্ডটির কাছে কিভাবে পৌঁছানো যায় সেই পরিকল্পনা করছি।”
পাঁচ দিনের তল্লাশিতে লঞ্চ উদ্ধারের কোনো আশা না দেখে ক্ষোভের সঙ্গে হতাশাও ছিল পদ্মা পাড়ে। পাড়ে উৎসুক মানুষের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। তবে ধাতব বস্তু সনাক্ত হওয়ার খবরে আবার ভিড় বাড়ছে।
মাঝ নদীতে যেখানে পিনাক-৬ ডুবে গিয়েছিল, তার কাছাকাছি ১ কিলোমিটার ভাটিতে ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে ধাতব বস্তুটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
নদীতলের ওই এলাকায় অন্য নৌযানগুলোর যন্ত্রেও একটি ধাতব বস্তুর আভাস মিলেছিল। তবে কাণ্ডারির সোনার সাইড স্ক্যানারেই তা বেশি স্পষ্ট হয়।
এই প্রযুক্তিতে শব্দ তরঙ্গ পাঠিয়ে তার প্রতিফলন থেকে হিসাব কষে প্রতিফলকের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
এক্ষেত্রে একটি ধাতব বস্তুতে কাণ্ডারি থেকে পাঠানো শব্দতরঙ্গ বাধা পেয়ে ফিরে এসেছে এবং তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই ধাতব বস্তুটির দৈর্ঘ্য প্রায় লঞ্চটির সমান লম্বা।
মঞ্জুরুল করিম বলেন, “এটি পিনাক-৬ কি না, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে লঞ্চটির দৈর্ঘ্যের সঙ্গে ধাতব বস্তুটির মিল রয়েছে। এটির একটি অংশ ভেঙেও গেছে।”
নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের উপপরিচালক কমান্ডার হাবিবুল আলম জানান, সবগুলো তল্লাশি নৌযান নিয়ে তারা আশপাশের ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের জরীপ-১০ এর পাশাপাশি ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব দ্বীপ’ এই চারটি জাহাজও কাজ করছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ইতোমধ্যে বলেছেন, “বিশ্বমানের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা যতদিন পর্যন্ত লঞ্চটি উদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছেন, ততদিন পর্যন্তই উদ্ধার তৎপরতা চলবে।”
উদ্ধার অভিযান নিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনের ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার বলেন, “চেষ্টার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।
“দুর্ঘটনাস্থলে প্রবল ঘূর্ণি স্রোত এবং পানির গভীরতা প্রায় ৮০/৯০ ফুট। ঘূর্ণির কারণে নদীর তলদেশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। স্রোতে দূরে সরে বালুর নিচে চাপা পরে থাকতে পারে লঞ্চটি। তাই সনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে,” শনিবার দুপুরে বলেছিলেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র মাওয়া নৌট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে সি-বোট বা স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হলেও চালকরা তা মানছিল না। পরে বেলা ১২টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর একজন পরিচালক পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সি-বোট চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পদ্মা উত্তাল থাকায় গাড়ি পারাপারের তিনটি ডাম্প ফেরি চলাচলও বন্ধ আছে। বাকি চারটি ডাম্প ফেরি চলছে সতর্কতার সঙ্গে।
এখন রো রো ফেরিগুলোসহ মোট নয়টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে বলে বিআইডব্লিউটিসির এজিএম একেএম আশিকুজ্জামান চৌধুরী জানান।