মাওয়ায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ এর খোঁজে শনিবার নতুন কৌশলে শুরু হয়েছে অভিযান।
Published : 09 Aug 2014, 10:06 AM
এ পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুসন্ধানি জাহাজ জরিপ-১০ ও কান্ডারি-২ এবং সাইড স্ক্যান সোনার ব্যবহার করে ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব-দ্বীপ’ অভিযানে রয়েছে।
নৌ বাহিনীর সদরদপ্তরের উপপরিচালক কমান্ডার হাবিবুল আলম কান্ডারি-২ থেকে নতুন কৌশল সম্পর্কে জানান।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক দফা খোঁজ করার পর এখন স্রোতের অনুকূলে নদীর তলদেশের মাটির সাথে ‘গ্রাফনল’ বেঁধে দেয়া হচ্ছে। স্রোত যেদিকে যাচ্ছে গ্রাফনলসহ জাহাজটিও সেদিকেই যাচ্ছে। এভাবে প্রায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে ভাটির দিকে ২০ কিলোমিটার এগিয়ে যাচ্ছে কান্ডারি-২।”
এছাড়া ডুবে যাওয়ার পর লঞ্চটির ওজন অনুযায়ী এবং স্রোতের তীব্রতায় কোথায় গিয়ে লঞ্চটি পড়ে থাকতে পারে তা হিসাব-নিকাশ করে কয়েকটি সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাবিবুল আলম বলেন, “এখন ওই চিহ্নিত এলাকায় জরিপ-১০ কাজ করছে। এছাড়া ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব-দ্বীপ’ এই চারটি জাহাজ বিভিন্ন এলাকায় সাইড স্ক্যান সোনার দিয়ে সন্ধান চালাচ্ছে। নদীর তলদেশ ১০ মিটার থেকে ৪৬ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় এসব সন্ধানিদল জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
এর আগে ‘ইকো সাউন্ডার’ ও ‘সাব বটম প্রোফাইলার’ ব্যবহার করে দুর্ঘটনাস্থলকে ঘিরে ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও চিহ্নিত করা যায়নি লঞ্চটির অবস্থান।
গত ৪ অগাস্ট বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে লৌহজং ক্রসিংয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬।
প্রথম কয়েক দিনের ব্যর্থতার পর উদ্ধারকর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শক্তিশালী যন্ত্রপাতি নিয়ে সার্ভে ভেসেল জরিপ-১০ পৌঁছালে হয়তো পিনাকের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
এদিকে ছয় দিনেও লঞ্চের অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’ ও ‘রুস্তম’ মাঝ পদ্মায় অলস বসে আছে।
আহাজারিতে ক্ষোভ
দীর্ঘ ছয় দিনেও লঞ্চের অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় ক্ষোভ বাড়ছে স্বজনহারা পরিবারে। অনেকেই লঞ্চ উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে লাশের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোতে নিজ উদ্যোগে খুঁজে ফিরছেন।
নিখোঁজ স্বজনদের অভিযোগ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বিলম্ব করার কারণে লঞ্চটি পাওয়া যাচ্ছে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, চেষ্টার কোন ত্রুটি হচ্ছে না। দুর্ঘটনাস্থলে প্রবল ঘূর্ণি স্রোতে এবং পানির গভীরতা প্রায় ৮০/৯০ ফুট। ঘূর্ণির কারণে নদীর তলদেশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
স্রোতের কারণে লঞ্চটি দূরে সরে গিয়ে বালুর নিচে চাপা পরে থাকতে পারে বলে তার ধারণা।
উদ্ধার ৪০, হস্তান্তর ২৩
এদিকে ভাটির বিভিন্ন নদীতে শুক্রবার চারটি লাশ ভেসে ওঠার পর নতুন কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। ওই চার লাশ নিয়ে উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ এ। এর মধ্যে ২৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া বিকৃত হয়ে যাওয়া ১২টি লাশ শনাক্ত না হওয়ায় ডিএনএ নমুনা ও ছবি রেখে সেগুলো দাফন করা হয়েছে মাদারীপুরে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানিয়েছেন, তাদের হাতে থাকা তালিকা অনুযায়ী পিনাক-৬ এর ১২৬ জন যাত্রী এখনো নিখোঁজ।