নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় সিআইডির তদন্ত বন্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 10 Jul 2014, 12:42 PM
তবে এ বিষয়ে আদালতের আগের আদেশে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন আদেশে সিআইডিকে ‘ইনভেস্টিগেশন’ এর পরিবর্তে ‘ইনকয়ারি’ করতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সাত খুনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী শামীম সরদার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিরোধিতা করেন।
শামীম সরদার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “এই আবেদনে অ্যাটর্নি জেনারেল আইনের প্রশ্ন তুলেছেন, আমি বলেছি, যেহেতু আইনের প্রশ্ন, তাই বারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের এখানে অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে ডাকা হোক।
“এখানে প্রত্যেকটি আদেশই নিয়মিত কাজের অংশ। একমাত্র ব্যতিক্রমটি ছিল সিআইডির তদন্ত। আমরা বলেছি, এই ব্যতিক্রমটা ডিলিট করা উচিত হবে না। নিয়মিত তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারে। তারা খেয়াল খুশিমতো তদন্ত করতে পারে।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা তদন্তের থাকলেও এক স্বপ্রণোদিত আদেশে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকেও (সিআইডি) এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়। বলা হয়, মূল তদন্ত ডিবিই করবে, সিআইডি করবে ছায়া তদন্ত।
কিন্তু ফৌজদারি মামলার তদন্ত দুটি সংস্থার মাধ্যমে করা আইনগতভাবে সঠিক নয় এবং এতে বিচার ‘ভণ্ডুল’ হয়ে যাবে- এমন দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ সিআইডির ‘ছায়া তদন্ত’ বন্ধের আবেদন করে। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয়।
আদেশের পর মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আপিল বিভাগের পরামর্শে এই আবেদন করেছিলাম। এখন সেখানে আমরা অবহিত করব।”
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, হাই কোর্ট আদেশ সংশোধন করায় সিআইডি এখন কেবল সাত খুনের ঘটনার অনুসন্ধান করতে পারবে। আদালতের আদেশ অনুসারে এটা তাদের করতে হবে।
“তবে এ ধরনের কাজের সুযোগও আইনে নাই। আপিল বিভাগে প্রতিকার চাওয়া হবে।”
শামীম সরদার বলেন, আইনগত প্রশ্নে আদালত বলেছে, দুটি সংস্থা তদন্ত করতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ও ১৫৬ ধারা অনুসারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত পর্যবেক্ষণে একাধিক সংস্থা বা ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারে। এভাবে যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে।
“আদালত বলেছে, যেহেতু এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহল ও জনমনে একটা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে এবং ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে… এজন্য আদালত মনে করে, আজ যদি এই নির্দেশনায় হাত দেয়া হয় বা সরকারের আবেদন মতো বাতিল করা হয়, তাহলে জনমনে একটা ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে যে আদালতও বুঝি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সহযোগিতা করছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আদালত বলেছে, সিআইডি তাদের প্রতিবেদন এই আদালতে দাখিল করবে। প্রতিবেদনে যদি ডিবির তদন্তের অতিরিক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তা যুক্ত করে প্রতিবেদন দিতে নিয়মিত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হবে।”
চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার তদন্তের চারটি অগ্রগতি প্রতিবেদন এদিন আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ, যা আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর মধ্যে কাজের অগ্রগতি জানিয়ে হাই কোর্টের আদেশে গঠিত সার্বিক তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেয় এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আরো চার সপ্তাহ সময় চায়। বাকি তিনটি প্রতিবেদন দেয়া হয় পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাব মহাপরিচালক ও সিআইডি প্রধানের পক্ষ থেকে।
র্যাব ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্ত করছে। বাকি তদন্তগুলো হচ্ছে ঘটনা নিয়ে। র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এর আগে ঘটনার তদন্তের দিকে মোড় নিলে আদালত ইতোপূর্বে এই বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিল।
অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।