৭ খুনের ‘দোষ স্বীকার’ র‌্যাবের আরিফের

সাত খুনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তার একজন আরিফ হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2014, 09:23 AM
Updated : 4 June 2014, 04:08 PM

বুধবার নারায়ণগঞ্জের বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় তিনি জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর আরিফের সঙ্গে র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদকেও আদালতে আনা হয়েছিল।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর অবসরপ্রাপ্ত মেজর আরিফকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১৭ মে গ্রেপ্তারের পর থেকে জেলা পুলিশ লাইনে রেখে তিন দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তাকে। 

অন্যদিকে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা তারেককে চতুর্থ দফা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।  গ্রেপ্তার তাদের সহকর্মী এম এম রানাকে তৃতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের সময়  সামরিক বাহিনীর এই তিন কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এ ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর তাদের ফিরিয়ে এনে সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। এরপর তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর টানা ১৮ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন আরিফ। আদালত সূত্র জানায়, নজরুল হত্যামামলায় ২০ পাতার এবং চন্দন সরকার হত্যামামলায় ২০ পাতার জবানবন্দি দেন তিনি।  

বিচারককে একান্তে দেয়া এই জবানবন্দিতে কী বলেছেন আরিফ, তা জানা যায়নি। তবে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা সাবেক এই র‌্যাব কর্মকর্তা দিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।

“আমরা জানতে পেরেছি, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মেজর আরিফ হোসেন  রোমহর্ষক সেই ঘটনার লোম বর্ণনা দিয়েছে। অপহরণের পর ৭ জনকে কোথায়, কিভাবে, হত্যা করা হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন তিনি।”

মামলার প্রধান আসামি পলাতক কাউন্সিলর নূর হোসেনের সম্পৃক্ততার কথাও এই জবানবন্দিতে উঠে এসেছে বলে সরকারি এই কৌঁসুলি দাবি করেন।

নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলামের অভিযোগ, নূর হোসেন র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে এই খুন করিয়েছে। আর নূর হোসেনকে পালাতে সহায়তা করেছে র‌্যাব।

সাত খুনের তদন্তে আদালতের নির্দেশে যে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি হয়েছে, তাদের কাছে দেয়া সাক্ষ্যে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সাতজনকে তুলে নেয়ার সময় র‌্যাবের পোশাক পরিহিতদের দেখার কথা জানিয়েছেন।

এই খুনের বিচার দাবিতে আন্দোলনরত জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আদালতে এতদিন যে অভিযোগ করে আসছিলাম, মেজর আরিফ হোসেনের স্বীকারোক্তির মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।

“র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার সঙ্গে সন্ত্রাসী নূর হোসেনের সখ্য ছিল। নূর হোসেন টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”

তারেক সাঈদ

সহকর্মী আরিফ স্বীকারোক্তি দিলেও তারেক সাঈদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এখনো অস্বীকার করে চলেছেন। বুধবার আদালতে বক্তব্যে তিনি তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানান।

তারেক সাঈদকে চতুর্থ দফায় রিমান্ডের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত এবং নূর হোসেনের তথ্য জানতে চান বলে উল্লেখ করেন।

আদালতে শুনানিতে কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে কাউন্সিলর নজরুলসহ ৫ জনকে তাদের বহনকারী গাড়ি থেকে র‌্যাবের এই দুই কর্মকর্তাসহ অন্যরা র‌্যাবের মাইক্রোবাসে তুলছিলেন।

“এসময় পেছনে থেকে অপহরণের দৃশ্যটি মোবাইল ফোনে ভিডিও করার সময় র‌্যাব সদস্যরা চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালককেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।”

হত্যাকাণ্ডের আলামতে র‌্যাবের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নূর হোসেন কোথায় আছে? হত্যাকাণ্ডে কত টাকা লেনদেন হয়েছে? কোথায় ও কিভাবে হত্যা করা হয়েছে? অন্য আর কে কে হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছে-এটা জানতে হলে আসামি তারেক সাঈদকে আবারো সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।”

শুনানিতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত বলেন, “এই হত্যার পরিকল্পনাকারী কে? র‌্যাবের আর কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত এসব জানতে তাকে আরো ৭ দিনের রিমান্ডে দেয়ার প্রয়োজন।”

শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দিলে তারেক সাঈদকে পুনরায় জেলা পুলিশ লাইনে ফেরত নেয়া হয়, যেখানে গত ১৮ দিন ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।