নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় হাই কোর্টের আদেশে শুরু হওয়া সিআইডির ‘ছায়া তদন্ত’ বন্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেছে সরকার।
Published : 09 Jul 2014, 06:03 PM
বুধবার আবেদনের পর বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্রঠাকুরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানির দিন রেখেছে।
এর আগে আপিল বিভাগেও একই ধরনের আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ, যা এ সপ্তাহের শুরুতে শুনানির জন্য আসে। ওই দিন আপিল বিভাগের পরামর্শে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়।
ওই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে গঠিত সার্বিক তদন্ত কমিটি যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়েছে, তার ওপরও বুধবার শুনানির দিন ছিল। কিন্তু দুপুরের পর দেরি হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে তা পিছিয়ে দেয়া হয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।
মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাই কোর্টের দুটি আদালত এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছে। প্রথম আদালত ডিবির পাশাপাশি সিআইডিকেও সাত খুনের ছায়া তদন্ত করতে বলেছে।
“ওই আদেশের পরই রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে আপিলের আবেদন করেছে। সিআইডি যাতে তদন্ত না করে এবং একটাই যেন তদন্ত হয়- এই প্রার্থনা করে লিভ পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।”
সিআইডির তদন্ত বন্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জনমনে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হবে কি না- এ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো সন্দেহ হবে না। এই মামলা নির্ধারিত হয়েই আছে। আসামিরা প্রত্যেকেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
“এখন প্রশ্ন হলো মূল আসামিদের সঙ্গে আর কারা কারা ছিল, এটা বের করা।”
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ফৌজদারি মামলার তদন্ত দুটি সংস্থার মাধ্যমে করা আইনগতভাবে সঠিক নয়। এতে বিচার ‘ভণ্ডুল’ হয়ে যাবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, তিনি এর আগে মৌখিকভাবে আদালতে একই আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এক মামলায় দুটি চার্জশিট হয় না। হাই কোর্ট সে সময় তাকে বলে, মূল তদন্ত গোয়েন্দা পুলিশই (ডিবি) করবে। আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) করবে ছায়া তদন্ত।
“এটা চললেও বিভ্রাট ঘটবে। দুই সংস্থার সমন্বয় সম্ভব নয়। আইনেও অনুমোদন দেয় না।”
কয়েকটি সংস্থার আবেদনের বিষয়ে আদালত বলেছিল, তদন্তে ১৯-২০ হতে পারে। ১৫-২০ যাতে না হয়, সেটা ঠেকাতেই দুটি সংস্থাকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কথা হলো, আইনে দুটি সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করার কোনো বিধান নেই।
“প্রশাসনিক তদন্ত চলছে। র্যাবের তদন্তের বিষয়েও কিছু বলিনি। ফৌজদারি বিচারের তদন্ত হচ্ছে। এটার ব্যাপারে আমাদের কথা যে এটা একটি সংস্থার দ্বারাই হওয়া উচিত।”
তদন্ত থেকে সরিয়ে দিতে সিআইডিও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারা তাকে এ ধরনের কিছু বলেনি।
সিআইডির অগ্রগতি প্রতিবেদনে কী আছে- জানতে চাইলে তিনি আদালতে দেয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলতে রাজি হননি।
সিআইডিকে একমাত্র তদন্তের দায়িত্ব দেয়া যায় কি না- এ প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, “হাই কোর্টের আদেশে এক নম্বরেই আছে, ডিবি তদন্ত করবে। এই আদেশ অনুসারে গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত অনেক দূর এগিয়েও নিয়েছে। আদালত সংগ্রহও করেছে। কাজেই এখন ডিবিকে বাদ দিয়ে দেয়া হয় তাহলে তদন্ত কাজে আরো সর্বনাশ হবে।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণের পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলামের অভিযোগ।
শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন।
তার সীমান্ত অতিক্রমের খবর পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের সহযোগিতা চায়। এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছে ধরা পড়েন নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ।
র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। পরে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এরপর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে জবানবন্দি দেন তারা।
এদিকে সাত খুনের ঘটনা তদন্তের জন্য হাই কোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চের নির্দেশে গঠিত ‘সার্বিক তদন্ত কমিটি’ মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সেটা জানতে পেরেছি। কী কারণে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এখন সে বিষয়ে কাজ করছি। জড়িতদের সম্পর্কে অধিকতর তথ্য প্রমাণ সংগ্রহেরও কাজ চলছে।”