এই হত্যাকাণ্ডে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারী শহীদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে জিয়াউলের কথা বলাকে হুমকি মনে করছে আদালত।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্ত না হতে আদালতের নির্দেশের পরও র্যাবের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির খতিয়ে দেখার কথা বলা আদালত অবমাননার শামিল বলেও হাই কোর্টের মনে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে শুনানির এক পর্যায়ে আদেশও দিতে চেয়েছে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ।
শুনানিতে উপস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দেব? নাকি আপনি বিষয়টি দেখবেন?”
তখন মাহবুবে আলম বলেন, “আমিই পারব। এটা আমাকে বলা মানেই আদেশ দেয়া হল।”
এরপর আর কোনো আদেশ দেয়নি আদালত, যাদের নির্দেশে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে প্রশাসনিক একটি কমিটি কাজ করছে।
গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার তিন দিন পর তাদের লাশ পাওয়ার গেলে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন শহীদুল ইসলাম।
তা দেখে ৫ মে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। তদন্ত থেকে দূরে রাখতে বলা হয় র্যাবকে।
তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে অগ্রগতির প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই নির্দেশ মেনে দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি নেয় আদালত।
শুনানিতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে আদালত বলে, শহীদ চেয়ারম্যানকে আসামি করার কথা বলে পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। এটা হলে নিরপেক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যাবে না।
“এই শহীদ চেয়ারম্যানই সত্য উদঘাটন করেছেন, তাকেই হুমকি দেয়া হল।”
নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির গণশুনানি থেকে বেরিয়েও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে তাকে র্যাব এখন হুমকি দিচ্ছে।
গত ১২ মে দৈনিক যুগান্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল সাত খুনে কোনো ভাবে শহীদুল ইসলাম জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার কথা বলেন।
এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর তা নিয়ে শহীদুলের প্রতিক্রিয়া সংবাদপত্রে আসে, যা বিচারকের নজরেও এসেছে।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে র্যাব কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে পারবে না। কিন্তু র্যাবের ওই কর্মকর্তা নজরুলের শ্বশুর ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।
“এটা তো আদালত অবমাননার সামিল। শহীদ চেয়ারম্যানই প্রথমে সাহস করে সত্য বলেছেন। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মামলার অন্যতম সাক্ষী শহীদ চেয়ারম্যানকে পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।”
আদালত বলে, সাক্ষীকে তিনি হুমকি দিলেন। নজরুলের শ্বশুরকে আসামি করার হুমকি, তাহলে কি কেউ সাক্ষ্য দেবেন?
“র্যাব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী। সরকারে ভাবর্মূর্তির স্বার্থে সেখানে র্যাব না থাকলে ক্ষতি কী? এ মুহূর্তে ওই এলাকায় র্যাবের প্রয়োজন আছে কি? কারণ, না থাকলে মানুষ একটু নির্ভয়ে সাক্ষ্য দেবে।”
তবে একইসঙ্গে আদালত বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের দুই-একজনের জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা যায় না।
“র্যাবের দু-একজন খারাপ হয়ে গেলে গোটা বাহিনী কি খারাপ হয়ে যাবে? বিচার বিভাগের দু’একজন বা সাংবাদিকদের দু’একজন খারাপ হলে পুরো পেশার সবাই কি খারাপ হয়ে যাবে? বিষয়টি তা নয়।”
এই বেঞ্চের আদেশের পর হাই কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করেছিলেন নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পালসহ তিনজন।
তাদের আবেদনে ওই আদালত অভিযোগের মুখে থাকা তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তারা গ্রেপ্তার হননি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলে আসছেন, গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।
এই বেঞ্চের শুনানিতে বিজয় পাল এবং রিট আবেদনকারী অন্যদের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীও বক্তব্য দেন।
সুব্রত চৌধুরী তিন সাবেক র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের ওই আদালতের আদেশের শেষাংশ পড়ে শোনান, যেখানে ওই রিট আবেদনটি এই আদালতে স্থানান্তরের কথা বলা আছে।
তখন এই বেঞ্চের বিচারক বলেন, “ঠিক আছে, আমরা অবহিত হলাম।”